শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

পাঁচ বছর স্কুলে না গিয়ে নিয়মিত বেতন তোলেন প্রধান শিক্ষক

8 minutes read

দিনাজপুর চিরিরবন্দরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন তোলার অভিযোগ উঠেছে রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসগর আলী স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে পাঁচ বছর ধরে স্কুলে না গিয়েও অফিস সহকারি ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে হাজিরা খাতা বাসায় নিয়ে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয় আর এমপিও ভুক্ত হয় ২০০০ সালে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা মাত্র ৬০ জন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্টাকালিন সময় হতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন আসগর আলী। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই আহসান হাবিব ও তার আপন ভাতিজা সহকারি প্রধান শিক্ষক মামুনুর রসিদ। প্রধান শিক্ষকের পারিবারিক স্কুল হিসেবেই অত্র এলাকায় স্বীকৃত এই প্রতিষ্ঠানটি।

গত ২০১৮ সালে স্কুলের পাশে দূর্গা পুজা মন্দির কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধের পর থেকে আর স্কুলে আসে না তিনি।

সরেজমিনে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে ক্লাস রুমগুলো। নেই বিদ্যালয়ের কোন সাইনবোর্ডও। পারিবারিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারিভাবে কোন অবকাঠামোর বরাদ্দ হয়নি এই বিদ্যালয়টিতে।

বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনির ক্লাসে রুমে গিয়ে মেলেনি শিক্ষকের দেখা। ক্লাসে বসে গল্প করছে ১০ থেকে ১২ জন ছাত্রছাত্রী।

ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাদের প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তারা বলে, স্যারকে কোন দিন স্কুলে দেখি নাই। তবে স্যারকে আমাদের বাসার ওইদিকে দেখতে পাই নিয়মিত। এসময় তাদের ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে তারা বলতে পারেনি। তারা জানায় তাদের রোল দেয়া হয়নি। তাদের হাজিরাও নেয়া হয় না। এসময় অফিস রুমে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতে চাইলে সহকারি এক শিক্ষক জানান প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেননি। কেন স্কুলে আসেনি জানতে চাইলে বলেন,তারা কিছু জানি না। প্রধান শিক্ষকের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে হাজিরা খাতা নাই বলে জানান শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেনির ছাত্রী জুঁই আক্তার বলে, আমার বাড়ির কাছেই হেড স্যারের বাসা। কিন্তু স্যারকে কোন দিন স্কুলে দেখি নাই। খালি জানি আসগর আলী স্যার আমাদের স্কুলের হেড স্যার।

জুঁই আক্তারের কাছে তার ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে তার ক্লাস রোল বলতে পারেনি। সে বলে আমাদের তো রোল দেয় নাই। আর আমরা যে স্কুলে আসি আমাদের হাজিরা হয় না।

একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী শির্মল সরেন বলেন, হেড স্যারকে আমরা স্কুলে কখনো আসতে দেখি নাই। বাহিরে দেখি কিন্তু স্কুলে আসে না কি কারনে স্কুলে আসে না আমরা তো জানি না।

বিদ্যালয়ের সহকারি হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক শচীন রায় বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেশ কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ে আসে না। কারন হিসেবে তিনি বলেছেন বিদ্যালয়ের পাশে স্থানিয় দূর্গা পুজা মন্দির কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধের পর কয়েকটি মামলা হয়। তার পর থেকে সে আর স্কুলে আসে না।

বিদ্যালয়ের দপ্তরি মহেশ্বর রায় বলেন, হেড স্যার দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসে কি না ? কারো কাছে আমি বলতে পারব না।

বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক সহকারি শিক্ষক বলেন, মামলার বিষয়টি সামনে এনে উনি স্কুলে আসে না। কারন স্কুলের সভাপতি তার আপন বড় ভাই সহকারি প্রধান শিক্ষক তার ভাতিজা। উপেজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদকের সাথেও তার সম্পর্ক ভালো হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে না আসলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই আহসান হাবিবের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি।

রাজাপুর বুড়িহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আসগর আলী বলেন, স্কুলের পাশে আমার ব্যক্তিগত জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে বিদ্যালয়ের পাশে দূর্গা পুজা মন্দির কমিটির সাথে বিবাদ হলে বিভিন্ন মামলা হয়। সে সময় আমার বিরুদ্ধে তারা মূর্তি ভাঙ্গার মামলা দেয়। বিদ্যালয়ের পাশে মন্দির হওয়ায় তারা বিভিন্ন ভাবে আমাকে হুমকি দেয় যে স্কুলে আসলে আমার বিরুদ্ধে তারা আরো মূর্তি ভাঙ্গার মামলা দিবে তাই আমি স্কুলে না গেলেও স্কুলের যাবতীয় কাজ করি।

চিরিরবন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহি বলেন, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার অফিসে স্কুলে প্রয়োজনীয় কাজে নিয়মিত আসে দেখা হয়। উনি যে ২০১৮ সাল হতে স্কুল করে না সে বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আপনাকে অবগত করেছিলেন তখন কি কোন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহি বলেন, সে বিষয়টি নিয়ে তখন গুরুত্ব দেয়া হয়নি কারন স্থানীয় ভাবে এসব মতবিরোধ থাকতে পারে তাই সেটা তখন তদন্ত করে দেখা হয়নি। এখন বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

সুলতান মাহমুদ/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More