চুরির অপবাদ দিয়ে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে তেরো বছর বয়সী এক কিশোরের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়, এর আগে ওই কিশোরকে আটকে রেখে রাতভর তার ওপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। পরে সকালে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে স্থানীয় নাপিত এনে কিশোরটির মাথা ন্যাড়া করাসহ তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া বাজারে ঘটেছে এমন ঘটনাটি।
নির্যাতিত কিশোর হল– আবুল কালাম। সে সরাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাকপ্রতিবন্ধী হতদরিদ্র আব্দুস সালামের ছেলে।
এদিকে শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকালে মাথা ন্যাড়া ওই কিশোরের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা জানাজানি হয়।
ঘটনাটি জানার পর শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল ও কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন।
কিশোরটির পরিবারের দাবি, স্থানীয় সরাপাড়া বাজারের কিছু দোকান গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে আবুল কালাম মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে ওই বাজারে গিয়েছিল। এ সময় বাজারের একটি দোকানে চুরির অপবাদ দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন তাকে আটক করে। পরে স্থানীয় মতিউর রহমান অবিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিসহ কয়েকজন মিলে কিশোর কালামকে রাতভর শারীরিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে পরদিন সকালে এ ঘটনায় সরাপাড়া গ্রাম্য সালিশ বসানো হয়। সালিশে স্থানীয় বাসিন্দা ইউপি সদস্য সবুজ মেম্বার, সাবেক ইউপি সদস্য হাদিস মেম্বার, আবু তাহের, কামাল ব্যাপারী, মতিউর রহমান অবিশ্বাস, ওমর ফারুক, আল আমিন, সিরাজসহ শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। ওই সালিশে কিশোর কালামের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয় এবং তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সম্প্রতি সরাপাড়া বাজারের বিভিন্ন দোকানে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার (৭ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টার দিকে ওই বাজারের শাহীন নামে এক ব্যক্তির দোকানের বেড়ার টিন ভাঙা দেখতে পান স্থানীয়রা। এ সময় ওই স্থানে কিশোর আবুল কালামকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে চোর সন্দেহ করে আটক করেন। তবে কিশোর আবুল কালাম চোর প্রকৃতির ছেলে নয় এবং চুরির কোনো ঘটনার সাথে সে জড়িত নয় বলে জানান অনেকেই।
নির্যাতনের শিকার কিশোর আবুল কালামের মা নুরেছা আক্তার বলেন, আমরা গরীব মানুষ। তাই লোকজন চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সহজ সরল ছেলেটার ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে। তারা এমন মারধরই করেছে যে– সে ভবিষ্যতে কাজ করেও মনে হয় খেতে পারবে না।
ওই সালিশে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি সদস্য সবুজ মেম্বার বলেন, ঘটনাটি শোনার পর আমি রাতে এবং সকালেও চেষ্টা করেছি সমাধান করার জন্য। কিন্তু কেউ–ই আমার কথা রাখেনি। তাই আমি সালিশের শেষের দিকে সালিশ থেকে চলে গিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে কথা হলে ওসি মো. আলী হোসেন বলেন, আমি এবং ইউএনও স্যার ঘটনাস্থলে আছি। বিষয়টি বিস্তারিত জানার পর পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ