দালালমুক্ত অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখছে আমি প্রবাসী। প্রায় ৫০ লাখ ব্যবহারকারী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল কার্যক্রমটি।
*করোনায় ১৫ লক্ষেরও বেশি ভ্যাকসিন নিবন্ধন
*প্রায় ৫০ লাখ ব্যবহারকারী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে
*সহজ পদ্ধতিতে উচ্ছাসের জোয়ার বইছে তারুণ্যে
দুঃসময়ে করোনা মহামারীতে ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনে অগ্রণী ভূমিকাও পালন করা হয়। তখন প্রায় ১৫ লক্ষেরও বেশি নিবন্ধন সম্পূর্ন হয় এই অ্যাপের মাধ্যমে । এনালগ পদ্ধতিতে বিদেশ সেবায় এখন আর কাউকে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। দালালমুক্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহজেই এ তথ্যের দ্ধার উন্মুক্ত হওয়ায় উচ্ছাসের জোয়ার বইছে তারুণ্যে। মাত্র দু বছরে ঝামেলামুক্ত ভাবে সেবা পেয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
জানা যায়, ‘আমি প্রবাসী’ সরকার অনুমোদিত অ্যাপ এবং ওয়েব পোর্টাল। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটির নির্দেশনায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য ২০২১ সালের ৮ মে যাত্রা শুরু হয়। অ্যাপটি ব্যবহার করে বিদেশে চাকরি নিতে ইচ্ছুক যে কেউ অনলাইনে বিএমইটি তথ্যভান্ডারে নিবন্ধন নিতে পারেন। বিদেশে চাকরির সন্ধান করতে পারেন। এ ছাড়া নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস, মেডিকেল সেন্টার, জেলা জনশক্তি অফিস এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বা মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অ্যাপের ব্যবহারকারীরা ব্র্যাকের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ এবং ব্র্যাক পরিচালিত ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তির সুযোগও পাচ্ছেন। সরকার অনুমোদিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘আমি প্রবাসী’ অভিবাসন প্রক্রিয়ার সকল জটিলতা দূর করে, সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে। আমি প্রবাসী অ্যাপ এবং ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় জড়িত সকল অংশীজনের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং বহুলাংশে হয়রানি হ্রাস পাচ্ছে।
ডিজিটাল এই পদ্ধতি থেকে উঠে আসছে অনেক সফলতার গল্প। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান থেকে পড়াশোনা শেষ করে উন্নত রাষ্ট্রের পাড়ি জমান নুর উদ্দিন। করোনার সময়ে ভ্যকাসিন প্রক্রিয়া ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ থেকেই সম্পূর্ণ করেন। মাস কয়েক আগে ইলেক্ট্রনিক্স কাজে মালোশিয়ার একটি কোম্পানিতে আসেন তিনি। তাকে সরকারি ও ভিবিন্ন এজেন্সিতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়নি। বিদেশে গিয়ে এক প্রতিক্রিয়া নুর উদ্দিন বলেন, বিদেশযাত্রার ধাপ গুলো আমি এই আপেই পেয়েছি। যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া এখানে দেওয়া ছিলো। আমার কাছে খুবই সহজ মনে হয়েছে এবং কোনো ধরণের জটিলতার মুখোমুখি পড়তে হয়নি। যে তথ্য ও কাগজপত্রগুলো চাওয়া হয়েছে আমি আমার হাতে থাকা মোমাইলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করেছি।
এছাড়া আমি প্রবাসীর বদৌলতে উম্মুক্ত হয়েছে বিদেশযাত্রার প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের দ্বার। অভিবাসন প্রক্রিয়ার অন্যতম সমস্যা হলো ভুল তথ্য। এতে করে বিদেশ যাত্রায় আগ্রহী কর্মীদের হতে হচ্ছে নানা রকম জটিলতার সম্মুখীন। আমি প্রবাসীর সেবা গ্রহীতারা এসব সমস্যা সহজেই এড়িয়ে যেতে পারছেন। অ্যাপটিতে রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জার্নি ম্যাপ, বিদেশযাত্রার সকল ধাপ সম্মিলিত চেক-লিস্ট, সকল ধরনের প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংরক্ষণের সুযোগ। শুধু তাই নয়, দেশের প্রয়োজনে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা মহামারীকালীন সময়ে বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিক ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনে ভূমিকা রেখেছে আমি প্রবাসী, এক্ষেত্রে সরকারকে কোন অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। মহামারীর মাঝে আমি প্রবাসী পনের লক্ষেরও বেশি নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। আমি প্রবাসী এই পরিষেবাটি প্রদান করায়, লক্ষ লক্ষ প্রবাসী কর্মীকে বিভিন্ন জেলা জনশক্তি অফিসে সরাসরি যাতায়াত না করে এবং লাইনে না দাঁড়িয়ে দ্রুত করোনার ভ্যাক্সিনেশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে সক্ষম হয়েছে। যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
নাগরিক সেবা নিশ্চিতে সরকারের এ উদ্যেগের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ভাষ্য, অ্যাপটির ব্যবহারকারীগণ যেমন কোন প্রকার দালাল কিংবা মধ্যসত্ত্বভোগীর দ্বারস্থ না হয়ে নিজে থেকেই বিদেশ যেতে দরকারী সরকারি প্রক্রিয়াগুলো অনায়াসে সম্পন্ন করতে পারছেন তেমনি আমি প্রবাসী লিঃ-এর ওয়েব পোর্টাল ব্যবহার করে রিক্রুটিং এজেন্সি, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) ও সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ তাদের কাজগুলো ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সহজে সম্পাদন করতে পারছেন। এ সম্পর্কে বিদেশ যেতে আগ্রহী আকাশ আহমেদ জানান, আমি মাস তিনেক আগে মধ্যেপ্রাচ্যে যেতে আবেদন করেছিলাম। এর মধ্যে এই আপ্সের মাধ্যমে আমি দুইবার তথ্য পাই। কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে আমি মোবাইলে এপ্সের মাধ্যমে সব পূরণ করে দিয়েছি। আশা করছি আমার খুব শীঘ্রই স্বপ্ন পূরণ হবে।
জটিলতা ছাড়াই সম্প্রতি স্বপ্ন সিঁড়িতে পা রাখেন তরিকুল ইসলাম। পরিবারের অর্থনৈতিক সঙ্কটে এসএসসি পরিক্ষার পরে আর বেশীদূর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। করোনার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি প্রবাসী আপ্সের সন্ধ্যান পান। এবং সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সামমিট করে অল্প সময়ের মধ্যে কোনো ধরণের জটিলতা ছাড়া তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। গেলো সপ্তাহে আনন্দিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, দেশে আমার যারা বন্ধু ও সহকর্মীরা রয়েছে তারা যেন বিদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলে সরকার অনুমোদিত ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ থেকে সকল ধরণের তথ্য সংগ্রহ করে। আশা করছি এ থেকে তারা উপকার পাবে এবং সকল ধরণের জটিলতা মুক্ত হয়ে সহজেই বিদেশে আসতে পারবে।
তবে অভিযোগ রয়েছে,আমি প্রবাসীর যাত্রার শুরু থেকেই অভিবাসন প্রক্রিয়ার বিদ্যমান ম্যানুয়াল পদ্ধতির কিছু সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেষী মহল এবং মধ্যসত্ত্বভোগীরা ডিজিটালাইজেশনের পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছে। তারা প্ল্যাটফর্ম এবং ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে চালিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত অপপ্রচার। আশার কথা, শত বাধা ও অপপ্রচার সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি-এর সহায়তায় প্রায় ৫০ লাখ ব্যবহারকারী নিয়ে আমি প্রবাসী একটি কার্যকরী ডিজিটাল অভিবাসন প্রক্রিয়া তৈরিতে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহিদুল আলম এনডিসি বলেন,আমাদের সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে পুরো দেশকে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে রয়েছেন। এটি আর খুব বেশি দূরে নয় কাগুজে কলমে আর কাজ হবে না অভিবাসনের সব কাজ অনলাইনে হবে। আমরাও সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরাও প্রবাসীদের নির্দেশনা দিয়ে থাকি আপনারা সরকারি কার্যক্রমকে বেশি গুরুত্ব দেন তাহলে দালাল ও প্রতারনার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।তবে এটিও ঠিক ৫০ বছরে রীতি নীতি হুট করে বদলে ফেলা যায় না। আমরা আমরা ডিজিটাল ও তারুণ্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগাচ্ছি।
আমি দৃঢ়তা সাথে বলতে পারি আমি দায়িত্বে আসার পর কাজের গতি তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে, ভোগান্তি অনেক কমে এসেছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই সকল কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনায় সক্ষম হবো।
আল/ দীপ্ত সংবাদ