এডিস মশার উৎপত্তি সাধারণত গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে। এ বছর বর্ষাকালেও তান্ডব ছড়াচ্ছে এডিস মশা। দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। রাত–দিন সমানে বাড়ছে ডেঙ্গুর আক্রমণ। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগীর সংখ্যা। এডিস মশার উৎপত্তি ঘটে বৃষ্টির জমে থাকা নোংরা পানি ও ময়লা আবর্জনা থেকে।
সাধারণত এডিস মশা কাউকে কামড়ালে সে ব্যাক্তির ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পরার আশঙ্কা থাকে। সেই ব্যক্তিকে আবার কোন ভাইরাসহীন মশা কামড়ালে সে মশাও ভাইরাসজনিত মশায় রূপান্তরিত হতে পারে। পরে এই মশা যতজনকে কামড়াবে প্রত্যেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। আসুন জেনে নেই ডেঙ্গু থেকে সহজে রক্ষা পাওয়ার ৫ উপায়–
বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা
বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ির আঙ্গিনা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে উঠে । বাড়ির আঙ্গিনা যেন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে না উঠে সে দিকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। বাড়ির চারপাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না। যে সকল জায়গায় এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে এমন স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে। যেমন– পানিতে জমে থাকা ডাবের খোসা, ভাঙা গাড়ির টায়ার ইত্যাদি। বাড়ির যে অংশে বৃষ্টির পানি জমে থাকে সে জায়গা মেরামত করুন। জমে থাকা পানিতেও জন্ম নেয় এডিস মশা।
গাছের টবের প্রতি বাড়তি যত্ন নিন
অনেকেই বাসার ছাদ কিংবা বারান্দায় ফুল বা ফল গাছ লাগাতে পছন্দ করেন। বর্ষা মৌসুমে গাছের টবের নিতে হবে বাড়তি যত্ন। যেন টবে বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার উৎপত্তি না হতে পারে। আমরা অনেক সময় টবে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ফেলতে চাই না, মনে করি গাছ সতেজ থাকবে। এই ধারণা ভুল। টবগাছ গুলোতে পানি জমে থাকলে গাছ ধীরে ধীরে পঁচে যায়। এছাড়া মশার উৎপত্তিও বৃদ্ধি পায়। তাই টবে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
ঘুমাতে হবে মশারি টাঙিয়ে
দিন হোক বা রাত আপনি বা আপনার শিশু যখনই ঘুমাতে যাবেন মশারি টাঙিয়ে ঘুমাবেন। মশারি টাঙালে মশাসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গের হাত থেকেও পাবেন রেহাই। ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই মশারি টাঙাতে হবে।
শিশুর প্রতি যত্ন নিন
আপনার বাসায় শিশু থাকলে তার প্রতি নিতে হবে বিশেষ যত্ন। শিশুরা যখন ঘুমাবে মশারি টাঙিয়ে দিতে হবে। শিশুদের ফুল হাতার জামা পরাতে হবে। বাইরে বের হলে শিশুদের শরীরে লাগাতে হবে মশা নিরোধীকরণ স্প্রে, ক্রিম বা জেল।
মশার কয়েল ব্যবহার বর্জন করুন
আমরা অতিরিক্ত মশা দেখলেই মশার কয়েল ব্যবহার করি মশা ধংস করার জন্য। মশার কয়েল শুধু শিশুদের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বড়দের জন্যও ক্ষতি। তাই কয়েলের পরিবর্তে মসকুইটো কিলার ট্র্যাপ, মসকুইটো কিলার বাল্ব, ইলেকট্রিক কয়েল, মসকুইটো রেপেলার মেশিন, ইলেকট্রিক কিলার ল্যাম্প, মসকুইটো কিলার ব্যাট,, ইত্যাদি ব্যবহার করুন। তবে এই ধরনের সামগ্রী শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ–
১. শরীরে ব্যথা হওয়ার সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথাও হতে পারে।
২. সাধারণভাবে জ্বরের তাপমাত্রা থাকতে পারে ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি । জ্বর একটানা ২–৩ দিনের বেশি স্থায়ী হতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে।
৩. ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীর ম্যাজম্যাজ করার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
৪. তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্তবমি, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকার্য কঠিন বা দ্রুত হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
ডেঙ্গু জ্বর দেখা দিলে করণীয়–
১. প্রচুর পরিমানে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। তৈলাক্ত ও মসলা জাতীয় খাবার এবং ক্যাফিনযুক্ত পানীয় ত্যাগ করতে হবে।
২. প্রচুর পানি পান করতে হবে সেই সাথে স্যালাইন ও খাওয়া যাবে।
৩. জ্বর ২–৩ দিনের বেশি হলে দ্রুত স্বাস্থকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
শায়লা/ দীপ্ত নিউজ