সিলেট বিভাগে দিন দিন উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় সড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। গত মাসে (মার্চ) সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৩৪ জন মারা গেছেন।
সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে তথ্যটি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়– বিদায়ী মার্চ মাসে সিলেট বিভাগে ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯৯ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়– মার্চ মাসে সারা দেশে ৪৮৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন নিহত, ১১৩৮ জন আহত হয়েছে। একই সময় রেলপথে ৫৩ টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত, ১৫ জন আহত হয়েছে। নৌ–পথে ০৯ টি দুর্ঘটনায় ০৭ জন নিহত, ১৪ জন আহত এবং ০২ জন নিখোঁজ হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ–পথে সর্বমোট ৫৪৯টি দুর্ঘটনায় ৫৯২ জন নিহত এবং ১১৬৭ জন আহত হয়েছে। এ মাসে ১৫২ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত, ৯৭ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ–পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এসব তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটি জানায়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৭৯ জন চালক, ১০১ জন পথচারী, ৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, ১২২ জন শিক্ষার্থী, ১৩ জন শিক্ষক, ১২ জন আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯০ জন নারী, ৫০ জন শিশু, ০২ জন সাংবাদিক, ০৭ জন মুক্তিযোদ্ধা, ০২ জন আইনজীবী ও ০১ জন প্রকৌশলী এবং ০৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
যার মধ্যে নিহত হয়েছে ০৩ জন পুলিশ সদস্য, ০৩ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ০২ জন আনসার সদস্য, ০১ জন বিমানবাহিনীর সদস্য, ১৪০ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৯৩ জন পথচারী, ৬৭ জন নারী, ৩৭ জন শিশু, ৪২ জন শিক্ষার্থী, ২৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ০৯ জন শিক্ষক, ০৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ০৩ জন চিকিৎসক, ০১ জন সাংবাদিক, ০২ জন আইনজীবী ও ০৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৬৬৬ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ১৬.৮১ শতাংশ বাস, ২৮.২৩ শতাংশ ট্রাক–পিকাপ–কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৪.৬৫ শতাংশ কার–জীপ–মাইক্রোবাস, ৩.৭৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ২৩.১২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.১১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৯.৩০ শতাংশ নছিমন–করিমন–মাহিন্দ্রা–ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭.৪৯ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৫.১৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬.৪২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৯.৬৫ শতাংশ বিবিধ কারনে এবং ১.২৩ শতাংশ ট্রেন–যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩.০৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩.২০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৫.১১ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬.১৬ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.২৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.২৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
পর্যবেক্ষণ মতে, সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে– চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতি ও বিপদজনক অভারটেকিং, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, চালকের কর্মঘন্টা ও বেতন সুনির্দিষ্টি না থাকা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা ও রাস্তার পাশে হাট–বাজার, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা এবং ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি ফলে সড়কে দুর্ঘটনা ক্রমবর্ধমান।
আফ/দীপ্ত সংবাদ