উত্তরাঞ্চলে বয়ে যাওয়া হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার হাড়কাঁপানো শৈত্যপ্রবাহ ও ঠান্ডা বাতাসে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা আরও বেড়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ১৪.৭ থেকে ১৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য মাত্র দুই থেকে তিন ডিগ্রিতে নেমে আসায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
তীব্র শীতের কারণে অধিকাংশ মানুষ ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ব্যবসা–বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে, বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নদীভাঙন কবলিত চরাঞ্চলে।
সূর্য সারা দিন মেঘ ও কুয়াশায় ঢাকা থাকায় যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
শীতবস্ত্রের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হলেও বিপুলসংখ্যক মানুষ অস্থায়ী ও রাস্তার পাশের বাজারগুলোতে পুরোনো গরম কাপড় কিনতে ভিড় করছে। বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে আজ জরুরি প্রয়োজনে সীমিতসংখ্যক মানুষ দেখা গেছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ, দিনমজুর ও নদীতীরবর্তী চরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আজ এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সর্বনিম্নœ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় সামান্য ওঠানামা লক্ষ্য করা গেছে।
তিনি বলেন, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য খুবই কমে গেছে এবং মেঘ ও কুয়াশায় সূর্য ঢেকে থাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে, যা আজ মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
আজ সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়: রংপুরে ১৩.৩ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১২.৪, সৈয়দপুরে ১৩, তেঁতুলিয়ায় ১২, ডিমলায় ১৩, রাজারহাটে ১৩.৪, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২.৮, লালমনিরহাটে ১৩.২ এবং গাইবান্ধায় ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল– রংপুরে ১৬.১ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১৪.৭, সৈয়দপুরে ১৬, তেঁতুলিয়ায় ১৬.২, ডিমলায় ১৬, রাজারহাটে ১৬.৪, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৫, লালমনিরহাটে ১৬.৩ এবং গাইবান্ধায় ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত কয়েক দিনে হাসপাতালগুলোতে সর্দি, কাশি, জ্বর, হাঁপানিসহ বিভিন্ন আবহাওয়াজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. গাউসুল আজিম চৌধুরী জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, প্রতিটি জেলা প্রশাসন স্থানীয়ভাবে গরম কাপড় কেনা ও বিতরণের জন্য নতুন করে ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছে।
রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়া জানান, স্থানীয়ভাবে কেনা ১২ হাজার ৫০০ কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আরও ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি, যা দিয়ে স্থানীয়ভাবে গরম কাপড় কিনে শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. আবদুল মতিন জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় সরকার থেকে পাওয়া ১২ হাজার ৫০০টি কম্বল এবং স্থানীয়ভাবে ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারি নতুন বরাদ্দ দিয়ে আরও গরম কাপড় কিনে শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
এদিকে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাতের বেলায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত ও দরিদ্র রোগীদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান।
এছাড়া রংপুর ও উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও বিভিন্ন গ্রাম ও দুর্গম চরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করা যায়।