একবিংশ শতাব্দীর চাহিদা ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান প্রশাসন। দেশের উচ্চশিক্ষার প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত রূপান্তর জাতীয় উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ।
শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বিশেষ সিনেট অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৩৩ বছর পেরিয়ে গেলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে যে পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজ বিনির্মাণকারী একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে পাঠ্যক্রম আধুনিকীকরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনায় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে আইসিটি ও ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং একাধিক ভাষায় প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডেটা সায়েন্সে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ভিসি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার ছাত্রীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরবর্তী পর্যায়ে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ছাত্রদের জন্যও সম্প্রসারিত হবে।
এ লক্ষ্যে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, অধিভুক্ত কলেজে ক্যারিয়ার ক্লাব গঠন এবং বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে ভার্চুয়াল লার্নিং সেন্টার, ইনস্টিটিউট অব ফরেনসিক সায়েন্স অ্যান্ড সাইবার সিকিউরিটি, আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজমসহ একাধিক একাডেমিক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে ৩১টি বিষয়ে পিএইচডি ও এমফিল প্রোগ্রামসহ এমডিপিএস ও এমপিএইচ কোর্স প্রবর্তন করা হয়েছে।
সমাপনী বক্তব্যে প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, আধিপত্যবাদী সাংস্কৃতিক ধারা চ্যালেঞ্জ করে জ্ঞান, ভাষা, ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিস্তারকে উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকার। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার ও সিনেট সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনেট সদস্যরা বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংস্কার কার্যক্রমে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজসমূহের সংশোধিত গভর্নিং বডি সংবিধি অনুমোদন এবং একাডেমিক গ্রুপগুলোকে অনুষদে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অধিবেশনের শুরুতে প্রয়াত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বিশেষ সিনেট অধিবেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, সিনেট সদস্য, ডিন, রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন।
৩