মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৫
মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৫

প্রবাসী ফুটবলারদের সুযোগ দিয়ে বিশ্বকাপে কেপ ভার্দে

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে ছোট ও অপরিচিত দেশগুলোর একটি—কেপ ভার্দে। এই দেশটিই লিখে ফেলেছে ফুটবল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। সোমবার (১৩ অক্টোবর) এসওয়াতিনিকে ৩০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে দেশটি।

আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে দশটি আগ্নেয় দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই ছোট্ট দেশটির আয়তন মাত্র চার হাজার বর্গকিলোমিটারের কিছু বেশি, আর জনসংখ্যা ২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী প্রায় ৫ লাখ ৯৩ হাজার। এত ক্ষুদ্র একটি দেশ বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে এক রূপকথার মতো সাফল্য।

আফ্রিকার বাছাইপর্বে কেপ ভার্দে ছিল শক্তিশালী ক্যামেরুনের গ্রুপে। গেল মাসে ক্যামেরুনকে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছিল তারা। তবে লিবিয়ার বিপক্ষে ৩৩ গোলে ড্র করার পর শেষ ম্যাচে জয়টাই হয়ে দাঁড়ায় তাদের একমাত্র লক্ষ্য। নিজেদের মাঠে এসওয়াতিনিকে ৩০ গোলে হারিয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ করে ব্লু শার্কসরা।

ম্যাচের প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় কেপ ভার্দে। ৪৮ মিনিটে দালিয়ন লিভ্রামেন্তো প্রথম গোল করেন। ছয় মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উইলি সেমেদো। ম্যাচের যোগ করা সময়ে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার স্টোপিরা তৃতীয় গোল করে নিশ্চিত করেন ঐতিহাসিক জয়।

এই জয়ে ১০ ম্যাচে কেপ ভার্দের পয়েন্ট দাঁড়ায় ২৩। অন্যদিকে অ্যাঙ্গোলার সঙ্গে ড্র করে ক্যামেরুনের পয়েন্ট হয় ১৯। ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিশ্বকাপের টিকিট পায় কেপ ভার্দে।

ঐতিহাসিক এই মুহূর্ত উদযাপন করতে সোমবার (১৩ অক্টোবর) কেপ ভার্দে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। রাজধানী প্রাইয়া থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত দ্বীপগুলোতেও উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষা জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৫ হাজার দর্শকের সামনে ফুটবলারদের সেই উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

কেপ ভার্দের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব। দেশটির ফুটবল ফেডারেশন ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলা কেপ ভার্দে বংশোদ্ভুত খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়া দলের ছয়জনের জন্ম নেদারল্যান্ডসে, অন্যদের কেউ জন্মেছেন পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইতালি ও আয়ারল্যান্ডে। দলের অধিকাংশই ইউরোপের ক্লাবে খেলেন, যা তাদের পারফরম্যান্সে বড় ভূমিকা রেখেছে।

আফ্রিকা থেকে এবারের বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করা ষষ্ঠ দেশ কেপ ভার্দে। এর আগে মরক্কো, তিউনিসিয়া, মিশর, আলজেরিয়া ও ঘানা জায়গা নিশ্চিত করেছে। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি হবে বিশ্বকাপে খেলা দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। ২০১৮ সালের আইসল্যান্ডের পরই অবস্থান কেপ ভার্দের।

১৯৭৫ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়া দেশটি ১৯৮৬ সালে ফিফার সদস্য হয়। ২০০২ সালে প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নেয় তারা। ২০১৩ সালে আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই চমক দেখায় কেপ ভার্দে। ২০২৩ সালেও তারা পৌঁছায় শেষ আটে। এবার সেই ধারাবাহিকতা রূপ নিয়েছে দেশের ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্জনে।

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে ৭০তম স্থানে থাকা দেশটির জন্য এটি শুধু ক্রীড়াজগতের নয়, জাতীয় আত্মপরিচয়েরও এক গৌরবময় অধ্যায়। ‘ব্লু শার্কস’দের এই সাফল্য ছোট দেশগুলোর জন্য এক বড় অনুপ্রেরণাও বটে।

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More