দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রসিক রায় জিউ মন্দিরে ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণে ভক্তদের প্রাণে এনেছে নতুন উচ্ছ্বাস। ১৬ বছর ১৪৪ ধারায় থাকার পর আবারও পূজার ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠলো ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহাসিক এ মন্দিরটিতে। এখন মূর্তি তৈরির ও মণ্ডপ সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার আউলিয়াপুরে শ্রীশ্রী রসিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ইসকনপন্থী একটি পক্ষ ও অপর একটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সে সময় মন্দিরের সেবায়েত ফুলবাবু নিহত হন। এর পর থেকেই দুর্গাপূজার সময় মন্দির এলাকায় জারি ছিল প্রশাসনের ১৪৪ ধারা।
কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রশাসনের উদ্যোগে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে অনুমতি দিয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণে দুর্গাপূজা আয়োজনের।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রসিক রায় জিউ মন্দিরে এবারের দুর্গোৎসব হয়ে উঠেছে আনন্দ–উচ্ছ্বাসে ভরা এক মহোৎসব। প্রশাসনের সহযোগিতা ও দুই পক্ষের সমঝোতায় যে উৎসবের দ্বার খুলেছে, তা শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে তুলবে। জেলা প্রশাসনের একান্ত প্রচেষ্টায় দুই পক্ষ সম্মত হওয়ায় এখানে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে সেখানে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার।‘
ঠাকুরগাঁও পূজা উদযাপন কমিটি সূত্র জানায়, এবার জেলায় মোট ৪৭৬টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসব পালন করা হবে। মণ্ডপের নিরাপত্তায় ৩৬৬টিতে ইতিমধ্যেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, বাকি গুলোতেও দ্রুত স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে। তবে ১৬ বছর পরে শুরু হওয়া রসিক রায় জিউ মন্দিরে বিশেষ নজর থাকবে পুলিশ প্রশাসনের।
স্থানীয় বাসিন্দা খগেন চন্দ্র বলেন, ‘১৬ টা বছর আমরা বাইরে গিয়ে অন্যের মন্দিরে পূজা করতাম। আমাদের এটা অনেক বড় কষ্ট ছিলো যে, আমরা নিজেদের মন্দিরেই পূজা করতে পারছিনা।‘
পূজা মণ্ডপের সহযোগি অনিক রায় বলেন, ‘আমার বয়স ২০ বছর, এই মন্দিরে সর্বশেষ যখন পূজা হয়, তখন আমি খুবই ছোটো। সেই পূজার কথা মনে নেই। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকে শুধু বাপা দাদার কাছে গল্প শুনেছি। খুব ইচ্ছা ছিলো, আমাদের নিজেদের এই মন্দিরে একদিন পূজা হবে, আমরা পূজা করবো। এবার সেই ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে।
স্থানীয় গৃহবধূ সুজলা রাণী বলেন, ‘আমার বিয়ের পর থেকে আমি এখানে কখনও পূজা দেখেনি। শুধু শুনেছি এখানে অনেক বড় পূজা হয়। খুব ভালো লাগছে এবার। এখন থেকে নিজেদের মন্ডপে পূজা করতে পারবো।‘
মন্দিরের সেবায়েত অপু সরকার জানান, ‘প্রায় ১৬ বছর পরে এখানে পূজা হচ্ছে। তাই সবার মাঝে উচ্ছ্বাস কিছুটা বেশি। আমরা আয়োজনে কোনো কমতি রাখছিনা। অনেক বড় ও জমকালো আয়োজন হবে আশা করছি।