পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির সঙ্গে একীভূত হচ্ছে দেশের শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজি–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এই উদ্যোগে ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রোডাক্ট লাইনে যুক্ত হবে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, পিসিবি, ইলেকট্রিক বাইকের মতো উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন অসংখ্য নতুন পণ্যসামগ্রী। ফলে ওয়ালটন হাই–টেকের ব্যবসায়িক সক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে, বাজার পরিধির আরও সম্প্রসারণ ঘটবে; কমবে পরিচালন ব্যয়। সেইসঙ্গে দেশের ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন খাত আরও সমৃদ্ধ হবে। হাই–টেক ও ডিজিটাল পণ্য উৎপাদনের হাব হিসেবে বাংলাদেশে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটবে।
একীভূতকরণের লক্ষ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি এবং ওয়ালটন ডিজি–টেক ইন্ডাস্টিজ লিমিটেডের মধ্যে একটি পারস্পরিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত বুধবার ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ৪৬তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় উক্ত একীভূতকরণ (মার্জার) সংক্রান্ত এমওইউ অনুমোদিত হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়ালটন ডিজি–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, মোবাইল ফোন, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড বা পিসিবি, ইলেকট্রিক বাইকসহ ১২৩ ধরনের হাই–টেকনোলজির পণ্য ও এক্সেসরিজ উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের একমাত্র মোবাইল ফোন এবং প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা স্থাপন করেছে। দেশের আপামর ক্রেতাসাধারণের হাতে সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিপণ্য তুলে দিয়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওয়ালটন ডিজি–টেক। ২০২৪ সালে ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছর অনুযায়ী ওয়ালটন ডিজি–টেকের পেইড আপ ক্যাপিটাল ছিল ৩০ কোটি টাকা আর নিট রেভিনিউ ১ হাজার১৫ কোটি ৯১ লাখ ১৪৬ টাকা এবং কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল ১৮ কোটি ১৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৪০ টাকা।
একই সময়ে ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পেইড আপ ক্যাপিটাল ছিল ৩০২ কোটি ৯২ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩০ টাকা। আর নিট রেভিনিউ ৭ হাজার ৫১২ কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৬ টাকা এবং কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ৫২ লাখ ৫৯ হাজার ৩২৭ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসর, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশন, এলিভেটর, ফ্যান, ক্যাবল, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন হোম ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন, বাজারজাত ও রপ্তানি করে।
একীভূতকরণ প্রসঙ্গে ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার মো. জিয়াউল আলম বলেন, ‘ওয়ালটন ডিজি–টেক দেশের শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে গুণগতমানের উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন আইটি পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে চলেছে ওয়ালটন ডিজি–টেক। এমন একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়ায় আমি ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য, সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ অগণিত ক্রেতা ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। এই একীভূতকরণ হলে ওয়ালটন হাই–টেকের ব্যবসার আরও সম্প্রসারণ ঘটবে। এতে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি লাভবান হবেন।’
ওয়ালটন ডিজি–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব ধরনের কমপ্লায়েন্স মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে ওয়ালটন হাই–টেক। যার ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। মৌলভিত্তিসম্পন্ন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হলে ওয়ালটন হাই–টেক আরও সমৃদ্ধ হবে এবং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত হবে।’
ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে, এই একীভূতকরণ সম্পন্ন হলে ওয়ালটন হাই–টেকের প্রোডাক্ট লাইন আরও শক্তিশালী হবে। প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে লিথিয়াম ব্যাটারি কারখানা স্থাপন করছে। একই সঙ্গে দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে পরিবেশবান্ধব ই–বাইক উৎপাদনে যাচ্ছে ওয়ালটন হাই–টেক। ফলে ই–বাইকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের মাধ্যমে এ খাতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরির অপার সম্ভাবনা রয়েছে ওয়ালটন হাই–টেকের।
স্থানীয় বাজারের সিংহভাগ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার নতুন নতুন দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে চলেছে ওয়ালটন হাই–টেক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪–২৫ অর্থবছরে নতুন করে সাতটি দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বাধুনিক উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, টেকসই ও উচ্চ গুণগতমান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পরিবেশবান্ধব ও মূল্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে আছে ওয়ালটন ব্র্র্র্যান্ডের পণ্য। ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বাজারে শীর্ষস্থানের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারেও ওয়ালটন ব্র্যান্ড ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।