বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘যারা নির্বাচনের পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে তারা গণতন্ত্র উত্তরণে বাধা সৃষ্টি করছে। ’
তিনি বলেন, ‘যারা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করছেন এর মাধ্যমে আপনারা হয়ত নিজের অজান্তেই গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছেন।’
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘একই সাথে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার পুনর্বাসনের পথও হয়তবা সুগম হচ্ছে যদি আমরা গণতন্ত্র উত্তোরণের পথে শর্তের পর শর্ত আরোপ করতে থাকি।’
গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের প্রতি আহ্বান রেখে তারেক রহমান বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সহযোগী তাদের প্রতি আমার বিনীত আহ্বান, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া উচিত হবে না যেই বিরোধকে পুঁজি করে পরাজিত ফ্যাসিবাদ নিজেদের অপকর্মগুলোকে জাস্টিফাই করার সুযোগ নিতে পারে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রতিটি ইস্যুতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত হতেই হবে এটি এমন কোন জরুরি বিষয় নয়। তবে অবশ্যই পলাতক স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ তাদের পুনর্বাসন ঠেকানো কিংবা দেশকে তাবেদার মুক্ত রাখার মতন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে অবশ্যই ঐক্যমত এবং ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত জরুরি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির বিজয় ঠেকানোর অপরাজনীতি করতে গিয়ে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশকে একটি তাবেদারি রাষ্ট্র ও একটি বিশাল বড় জেলখানায় পরিণত করেছিল। বর্তমানে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশেও যারা মনে করছেন নির্বাচন দিলে জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করবে, যারা এই চিন্তা থেকে বিএনপির বিজয় ঠেকানোর জন্য নানা রকম অপকৌশলের বা শর্তের বেড়াজালের আশ্রয় নিচ্ছেন,তারা একই ধরণের কাজ করছেন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করুন, জনগণের শক্তির উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস রাখুন। বিএনপির বিজয় যদি জনগণ দিয়েই থাকে সেই বিজয় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের রায় প্রদানের পথ রুদ্ধ করবেন না।’
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মানে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান হয়। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা উলু ধ্বনি এবং ঢাক–ঢোল বাজিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং তারেক রহমান হাত নেড়ে এই অভিবাদনের জবাব দেন।
পিআর ভোট দেশের জন্য এখনো উপযোগী নয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য এখনো উপযোগী নয় বলেই আমরা কম বেশি মনে করি। কাকে কিংবা কোন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে, নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠানো হচ্ছে, অবশ্যই জনগণের সেটি জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত যে পিআর পদ্ধতি এই পিআর পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হচ্ছে জনগণের সেটি জানার পরিষ্কার কোন সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘যে কারণে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জাতীয় সংসদে বা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে অবশ্যই তাদেরকে জনগণের মুখোমুখি হয়ে জনগণের আস্থা বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে জনগণের রায় অর্জন করা জরুরি। পিআর পদ্ধতি এবং আরো দুই–একটি ইস্যুতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা ভিন্ন মত রয়েছে। এই ধরনের ভিন্ন মত গণতান্ত্রিক বিশ্বে স্বীকৃত, এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে বাস্তবতার নিরিখে প্রতিটি ইস্যুই সময়ের সাথে সাথে সুন্দরভাবে সমাধান হয়ে যাবে বা সমাধান করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি ইনশাআল্লাহ।’
হিন্দু সম্প্রদায়কে জন্মাষ্টামীর শুভেচ্ছা জানিয়ে তারেক বলেন, কারো উপর কোন হামলা কিংবা অবিচার না হয় সেটি নিশ্চিত করা রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব। এই বাংলাদেশ কোন ব্যক্তি গোষ্ঠী কিংবা দলের নয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আপনার–আমার, আপনাদের–আমাদের সবার। দলমত, ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালি, অবাঙালি, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, বিশ্বাসী–অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী এই বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র গর্বিত পরিচয় আমরা বাংলাদেশী। দেশের প্রত্যেক নাগরিক সকল ক্ষেত্রে দেশের আইন অনুযায়ী সমান অধিকার ভোগ করবেন, এটি বিএনপির নীতি, এটি বিএনপির রাজনীতি।’
তিনি বলেন, ‘ রাষ্ট্র এবং সমাজের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে কোন দলীয় পরিচয় আবদ্ধ থাকা অবশ্যই জরুরি নয়। ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় একজন নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। কিন্তু একমাত্র গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনই দল মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।’
‘নির্বাচনে বিএনপি হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থন চায়’
তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আমাদের সামনে একটি বিশাল বড় সুযোগ। সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই ও বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আগামী নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের সমর্থন এবং আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা চায়। আবার আমি বলতে চাই, আপনার–আমার আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে দল–মত–ধর্ম–দর্শন যার যার, রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার। কিন্তু নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার।’