মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক মুন্নার বিরুদ্ধে প্রতারণা, কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নেয়া এবং শারীরিক–মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন তার স্ত্রী মৌসুমী হক।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
মৌসুমী জানান, ২০১০ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় মুন্নার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০১১ সালে ভালোবাসার টানে তিনি হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম ধর্মে রূপান্তরিত হন এবং মুন্নাকে বিয়ে করেন। বিয়ের আগে থেকেই তাকে নানা প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। বিয়ের পর থেকে ধীরে ধীরে তার কাছ থেকে সম্পদ হাতিয়ে নিতে থাকেন মুন্না।
মৌসুমীর দাবি, মুন্না প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছ থেকে সোয়া কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট, প্রায় ১৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ অর্থসহ মোট আড়াই কোটি টাকার বেশি সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ সংসার টিকিয়ে রাখার পরিবর্তে তাকে তালাক দিয়ে অসহায় অবস্থায় ফেলে দেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমি শুধু একটি সংসার চেয়েছিলাম। কিন্তু মুন্না আমার জীবনকে জাহান্নাম বানিয়েছে। মামলা করলেও সন্ত্রাসী, পুলিশ, সিআইডি এমনকি তার পরিবারের লোকজনকেও ব্যবহার করে আমাকে হুমকি দিচ্ছে।”
মৌসুমী অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় একাধিক বিয়ে করেন মুন্না। প্রতিবাদ করলে শারীরিক নির্যাতন ও তালাকের হুমকি দিতেন। অথচ ছাত্রদল ও যুবদলের সংগঠনগত নিয়ম অনুযায়ী একাধিক বিয়ে গ্রহণযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, নির্যাতনের প্রমাণ যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দেয়ার পর সংগঠন এক মাসের জন্য মুন্নাকে বহিষ্কারও করেছিল। কিন্তু পরে আবারও তাকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জে তার নেতৃত্বে বিশাল মিছিল দেখে বিস্মিত হন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মৌসুমী বলেন, “আন্দোলন–সংগ্রামের সময় মুন্না দেশে ছিলেন না। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট আমরা দুজন একসঙ্গে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরি। দেশে ফিরেই মুন্না আমাকে তালাকের নোটিশ দেয়। পাসপোর্ট যাচাই করলেই প্রমাণ মিলবে– তিনি আন্দোলনের সময় দেশে ছিলেন না।”
তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আর্তি জানিয়ে বলেন, “আমার কষ্টার্জিত অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও ফ্ল্যাট ফেরত নিয়ে দিন। আমার জীবনের নিরাপত্তা দিন। নয়তো আমাকে মুন্নার হাতে মরতে হবে। আমি মরার আগেই বিচার চাই।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুন্নার বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার কালিপুরে কুখ্যাত নৌ ডাকাত পিয়াস বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রভাব খাটিয়ে এই বাহিনীর সঙ্গে মিলে মেঘনা নদী থেকে বালু লুটের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত যুবদল নেতা মুন্নার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।