মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ও লঞ্চঘাটে নদীভাঙন থেকে রক্ষায় মানববন্ধন এবং সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে ঘাট এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করে স্থানীয়রা।
আন্দোলনকারীরা জানান, পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাটুরিয়া ঘাটসংলগ্ন ধুতরাবাড়ি ও তেগুরি গ্রামসহ পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটিতে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। এরইমধ্যে লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনে ফেরিঘাটও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়গুলো উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। এলাকাবাসীদের বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
এর প্রেক্ষিতে দুপুরে স্থানীয় দাসকান্দি থেকে নয়াকান্দি পর্যন্ত নদীভাঙন প্রতিরোধ ও প্রতিকারের দাবিতে পাটুরিয়া ঘাট সংলগ্ন শহীদ রফিক চত্বরে উথলী–পাটুরিয়া সড়কে তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ফেরি ঘাট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এলাকাবাসী। বেলা ১২টার দিকে মিছিলটি পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে শহিদ রফিক চত্বর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে উথলী–পাটুরিয়া সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এলাকাবাসী। বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে নদী পারাপারে বাসের যাত্রী ও পরিবহন–শ্রমিকেরা ভোগান্তিতে পড়েন। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে। তবে আন্দোলনকারীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বেলা তিনটার দিকে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করলে তারা সড়ক থেকে সরে যান।
অবরোধ চলাকালে নদীভাঙন প্রতিকারের দাবিতে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন খান (পান্নু), ব্যবসায়ী নূর ইসলাম, স্থানীয় আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাপস খান, স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন, উত্তম পাল, আরিফ হোসেন ও রানা শিকদার।
বক্তারা বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাটুরিয়া ফেরিঘাট নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘাট এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে অনেকে পথে বসে গেছেন। অথচ ভাঙনরোধে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের জানালেও তাঁরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নদীভাঙনে প্রতিরোধে বক্তারা দাসকান্দি থেকে নয়াকান্দি এলাকা পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ঘাট এলাকায় দুই কিলোমিটার এলাকা বিআইডব্লিউটিএর আওতাধীন। এরপরও সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাটুরিয়া ঘাট ও আশপাশে নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে। তবে ইতিমধ্যে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
জাহিদুল হক চন্দন/এজে/দীপ্ত সংবাদ