বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫

২০০ বছরের স্মৃতি বহন করছে নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

নির্মাণশৈলীতে সমৃদ্ধ নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদটি ১৯৫০ সালে পুনঃনির্মাণ করা হলেও এটি প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। মুসলিম স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে মাইজদী বড় মসজিদ নামেই বেশি পরিচিত।

নোয়াখালী জেলার ইতিহাস পাঠে জানা যায়, ১৮৪১ সালে পুরাতন নোয়াখালী শহরের বাসিন্দা ইমাম উদ্দিন সওদাগর নিজের জমিতে একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। মূল নোয়াখালী শহর মেঘনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সময় সেই মসজিদটিও নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে যায়। পরবর্তীতে নোয়াখালী জেলার মূল শহর মাইজদীতে স্থানান্তর করার সময় ১৯৫০ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তায় নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ পুনঃনির্মাণ করা হয়।

মসজিদ প্রাঙ্গণের বিশালতা ও বাহ্যিক সৌন্দর্যের কারণে যে কারোই দৃষ্টি কাড়ে এই মসজিদ। মূল রাস্তা থেকে মসজিদের মেইন গেট দিয়ে ঢুকেই চোখে পড়ে মসজিদ প্রাঙ্গণের বিশালতা। মসজিদ লাগোয়ো বিশাল একটি দিঘি মসজিদের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদের ভেতর প্রবেশ করতেই শরীরে অনুভূত হয় অন্যরকম প্রশান্তি। মসজিদের চারপাশ, দেয়াল এবং ছাদ সবটাই নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত। চারপাশে যেমন আছে মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন, তেমনি আছে দেশীয় লোকজ ঐতিহ্য।

জানা যায়, নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদের মূল এলাকা প্রায় ৩ একর ৮০ ডেসিমেল। এই মসজিদটি তৈরির সময় ছোট এক তলা ভবনে অপরূপ মুসলিম স্থাপত্য ও লোকজ শিল্পের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। কোরানের আয়াত ও উপদেশ বাণী উৎকীর্ণ করা হয়েছে মসজিদ ভবনের দেয়ালে দেয়ালে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট ও প্রস্থে ৮০ ফুট। মসজিদটির মূল ভবনে তিনটি সুদৃশ্য গম্বুজ ও নয়টি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। এ মসজিদের অভ্যন্তরে আছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি।

সূত্র জানায়, পুরাতন মসজিদটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সময় ঝাড়বাতি, লোহার সুদৃশ্য গেট ও অসংখ্য শ্বেত পাথরের টুকরো রক্ষা করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরবর্তীতে মসজিদটি পুনঃনির্মাণের সময় সেগুলো মসজিদে স্থাপন করা হয়। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মসজিদের স্মৃতিচিহ্ন আজও টিকে আছে এই মসজিদের কাঠামোতে। মুসল্লিদের সার্বিক সুবিধার জন্য এখানে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক শৌচাগার, গোসলখানা ও ওজুখানা।

মসজিদের পশ্চিমে রয়েছে একটি বড় পুকুর, দক্ষিণে নোয়াখালী জিলা স্কুল, পূর্বে রেল স্টেশন রোড, নোয়াখালী সার্কিট হাউজ এবং জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। উত্তরে জেলা সড়ক বিভাগের ভবন ও গণপূর্ত বিভাগের ভূমি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও এই মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি মো. হাফিজ উল্লাহ বাসসকে বলেন, প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ মসজিদটিতে জামাতে নামাজ আদায় করেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি নিজেও এই মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করেন। তিনি বলেন, মসজিদের ভেতরে পুরাতন স্থাপত্য নিদর্শনগুলো মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে।

এই মসজিদের আরেক মুসল্লি ইব্রাহীম হোসেন বাসসকে বলেন, মসজিদের আশেপাশের শতাধিক মুসল্লি প্রতিদিন এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিরা এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।

প্রবীণ ইসলামি শিক্ষাবিদ নোয়াখালী কারামাতিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আমিন উল্ল্যাহ বাসসকে বলেন, নোয়খালী শহরের জামে মসজিদটি ১৮৪১ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইমাম উদ্দিন নামের এক সওদাগর নিজ জমিতে নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ স্থাপন করেন। মূল নোয়াখালী শহরের সঙ্গে এই জামে মসজিদটিও মেঘনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে ১৯৫০ সালে জেলার মূল শহর মাইজদীতে মসজিদটি স্থানান্তর করা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তায় নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ পুনঃনির্মাণ করা হয়।

তিনি বলেন, ১৮৪১ সালে নির্মিত মসজিদের অনেক নিদর্শন এই মসজিদটিতে স্থাপন করা হয়েছে। এ কারণেই নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদটি পুরাতন নোয়াখালী শহরেরও স্মৃতির নিদর্শন। ১৯৯২ সালে মসজিদটির সর্বশেষ সংস্কার করা হয়।

মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা মো. দিলওয়ার হোসাইন বলেন, প্রায় ৩ দশমিক ৮ একর জায়গার ওপর নির্মিত হয়েছে এ মসজিদটি। মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট এবং প্রস্থ ৮০ ফুট। প্রতিদিন এখানে নামাজ আদায় করেন হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। জুমার নামাজের সময় তা কয়েক গুণ হয়ে যায়। এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পেরে তৃপ্ত হন মুসল্লিরা।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More