বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৭, ২০২৫
বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৭, ২০২৫

বাংলায় আইটি শিক্ষার নীরব কাণ্ডারি ঢেউ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

বাংলা ভাষায় তথ্যপ্রযুক্তির মতো জটিল বিষয়কে সহজ করে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মধ্যে মোজাহেদুল ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। পাঠকদের কাছে ‘ঢেউ’ নামেও পরিচিত এই লেখক ও সাংবাদিকের কাজ শুধু বই লেখাতেই সীমাবদ্ধ নয়—তিনি বাংলা ভাষায় প্রযুক্তি শিক্ষার পথ খুলে দিয়েছেন বহু আগেই, যখন দেশে ইন্টারনেটের চল ছিল সীমিত, আর ফেসবুক বা ইউটিউব কেবল কল্পনায়।

২০০০ সালে ‘দ্য নিউ নেশন’এ তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতা শুরু করে পরবর্তী দুই দশকে তিনি যুক্ত হন ‘আজকের কাগজ’, ‘কম্পিউটার বার্তা’, ‘বিজ’, এবং ‘দৈনিক ইত্তেফাক’এর মতো প্রতিষ্ঠানে। বাংলায় কম্পিউটার শেখার যাত্রা সহজ করতে তিনি রচনা করেছেন ডজনখানেক বই—যার মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ তরুণ কম্পিউটার পরিচালনার মৌলিক জ্ঞান অর্জন করেছে।

তার রচিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘প্র্যাকটিক্যাল নেটওয়ার্কিং হ্যান্ডবুক’, ‘৭ দিনে ওয়েব ডিজাইন’, ‘মাস্টারিং ইকমার্স’, ‘সম্ভাবনার ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’, এবং ‘কম্পিউটার হার্ডওয়্যার’। এই বইগুলোর পাঠেই অনেক শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো ইমেইল অ্যাকাউন্ট খুলেছে, প্রিন্ট দিয়েছে কিংবা অফিস অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার শিখেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গেও তাঁর বইগুলো প্রশংসিত হয়েছে।

২০০৩ সালেই তিনি বেকার শিক্ষিত তরুণদের জন্য গ্রাফিক ডিজাইন, ইন্টারনেট ব্যবহার, কমার্স ও অনলাইন নিরাপত্তার মতো বিষয়ে প্রশিক্ষণমূলক লেখা শুরু করেন। সরকার, এনজিও ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও তাঁর বই ব্যবহৃত হয়েছে। ২০০৭ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ২০১৭ সালে ব্যানবেইস তাঁর লেখা বই প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাদান সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সংগ্রহ করে।

বাংলাদেশের তরুণ জনসংখ্যার একটি বড় অংশ প্রযুক্তি নির্ভর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে। মোজাহেদুল ইসলামের লেখনি সেই পথ চলার এক অনন্য সহযাত্রী। তার বই পড়ে প্রায় ২৩ লাখ মানুষ মৌলিক কম্পিউটার পরিচালনা শিখেছে, ১৮ হাজারের বেশি বেকার তরুণতরুণী এখন ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে।

তার অনুপ্রেরণায় অনেক প্রতিষ্ঠান সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করেছে—যেমন ‘আমাদের গ্রাম’, ‘সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’, এবং ভাসমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এগুলোর অনেকগুলো পরিচালিত হয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বা আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায়।

সাংবাদিক হিসেবেও মোজাহেদুল ইসলাম তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণে যুক্ত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি, ইন্টারনেট সোসাইটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাংবাদিকতা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্যাক্টচেকিং ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

তার উল্লেখযোগ্য সম্মাননার মধ্যে রয়েছে— প্রমিনেন্ট আইসিটি জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ড (২০২২), ডিজিটাল বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড (২০২২), আইটি জার্নালিস্ট অব দ্য ইয়ার (২০২২), বেস্ট অথর অ্যাওয়ার্ড (২০২১), কমার্স মুভার্স অ্যাওয়ার্ড (২০২০), বাংলাদেশ মাস্টার ব্র্যান্ডস (২০১৯), ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটি ক্রাউন অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), বেস্ট টেক রিপোর্টার (২০১১), ব্রিটিশ কাউন্সিলের বেস্ট মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর (২০১০)

২০০৭ সালে তিনি বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (BIJF) সাধারণ সম্পাদক এবং ২০১৯ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে সংগঠনটি প্রযুক্তি সাংবাদিক সমাজের পেশাগত উন্নয়নে নানা কার্যক্রম চালিয়েছে।

মোজাহেদুল ইসলাম শুধু প্রযুক্তির সংবাদ পরিবেশন করেন না—তিনি নিজেই প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের একজন দূরদর্শী চিন্তাবিদ। প্রযুক্তির আলো যাতে গ্রামের অন্ধকার ঘরে পৌঁছে যায়, সেই স্বপ্ন নিয়েই তিনি লিখেছেন, চলেছেন নীরবেনিঃশব্দে, কিন্তু দৃঢ়তায়।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশই তরুণ। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটির বেশি, যার মধ্যে প্রায় ৬ কোটি তরুণতরুণী—যারা দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। এই বিশাল যুবশক্তিকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী প্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ।

মোজাহেদুল ইসলামের লেখা বইগুলো গত দেড় দশক ধরে প্রযুক্তিশিক্ষা, ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। গত ১৫ বছরে প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী তার বই পড়ে কম্পিউটার পরিচালনার মৌলিক জ্ঞান অর্জন করেছে।

বর্তমানে অধিকাংশ সরকারি সেবা অনলাইনে রূপান্তরিত হওয়ায় ঘরে বসেই ইনথি, চাকরির আবেদন, পরীক্ষার ফলাফল, লাইসেন্স ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ সহজ হয়ে উঠেছে।

তার লেখা বইয়ের মাধ্যমে কয়েক লাখ মানুষ মৌলিক কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করেছে। প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী ইমেইল খোলা, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন ও প্রিন্ট দেওয়ার মতো দৈনন্দিন কাজগুলো নিজেরাই করতে পারছে। পাঁচ লাখেরও বেশি নাগরিক এখন অনলাইনে সরকারি সেবা নিজেরাই গ্রহণ করতে সক্ষম। আর প্রায় ১৮ হাজার বেকার তরুণতরুণী ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More