প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ প্রতীক কাউকেই দেওয়া হবে না। ‘শাপলা’ প্রতীক হিসেবে দিলে ‘নাগরিক ঐক্য‘কেই দিতে হবে।
বিবিসি বাংলা‘কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিইসি এসব কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলা সম্পাদক মীর সাব্বির।
বিবিসি বাংলা: বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে, আপনারা কি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?
সিইসি: সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যদি হয় আমাদের তরফ থেকে আমরা প্রস্তুত। আমরা ওভাবে করতে চাই, উনারা যে তারিখে পোলিং ডেট চান, যেদিন ভোট হয়, সেদিন যাতে আমরা একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দিতে পারি, সেই লক্ষ্যেই আমরা প্রস্তুতিটা নিচ্ছি।
বিবিসি বাংলা: কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ এখন নেই, এটার বিষয়ে আপনার কী মত?
সিইসি: অ্যাকচুয়ালি রাজনীবিদদের বক্তব্যের বিষয়ে আমরা গাইডেড না। রাজনীতিকরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। কোনো কোনো দল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলে, পরে আবার ব্যাক ট্র্যাক করে বলছে যে সংস্কারের আগে ভোট হতে পারবে না। নানা ধরনের কথা বলে। এইটা হলো রাজনৈতিক বক্তব্য।
বিবিসি বাংলা: ক্ষমতাচ্যুত আ. লীগের কার্যক্রম বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে সরকার, তার অর্থ কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না তারা?
সিইসি: উনাদের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। যদি বিচার শেষ হয়, যদি শাস্তি না দেওয়া হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া না হয়; সরকারের যে সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী তাদের রেজিস্ট্রেশন রাখাই তো মিনিংলেস হয়ে যায়। তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। এ জন্য আমরাও রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে দিয়েছি।
বিবিসি বাংলা: সাবেক দুইজন নির্বাচন কমিশনারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে হেনস্তাও করা হয়েছে। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
সিইসি: দেখেন এটা একটা বিচারাধীন বিষয়। এই বিচারাধীন বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমার পক্ষ থেকে এ নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।
বিবিসি বাংলা: অনেকগুলো দল আপনাদের কাছে নিবন্ধন চেয়েছে। প্রায় দেড়শোর মতো। অনেকের সাইনবোর্ডও নাই। ঝড়ে উড়ে গেছে। এই নিবন্ধনের ব্যাপারে আপনারা কী করবেন? নির্বাচনের সময় তো খুব বেশি নেই।
সিইসি: আমাদের তো স্ক্রুটিনি (যাচাই বাছাই) শুরু হয়ে গেছে। আমরা সব আবেদন পর্যালোচনা করছি। যাদের যে ডকুমেন্টস শর্ট আছে, তাদেরকে আমরা ১৫ দিন সময় দেবো। সময় দেওয়ার পর যারা কন্ডিশন ফুলফিল করবে না তাদের তো আমরা রেজিস্ট্রেশন দিতে পারবো না। আইন অনুযায়ী যে শর্ত আছে সেটা পূরণ করলেই তারা নিবন্ধন পাবে।
বিবিসি বাংলা: অনেকগুলো দল। এই সময়ের মধ্যে যাচাই বাছাই করা যাবে বলে মনে করেন? কারণ অনেকগুলো দল আবেদন করেছে।
সিইসি: অসুবিধা নাই, আমাদের তো ফিল্ড অফিস আছে অনেক, ওরাই আমাদের রিপ্রেজেন্ট করে। ৫৭০০ লোক কাজ করে আমাদের ফিল্ডে। তাদের মাধ্যমে যাচাই বাছাই অলরেডি শুরু করে দিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট আসা শুরু করেছে।
বিবিসি বাংলা: এর মধ্যে এনসিপি‘ও আছে। তারা প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা‘ চেয়েছে। এটা নিয়ে একটা বিতর্কও আছে যেহেতু জাতীয় ফুলও শাপলা। এ বিষয়ে আপনারা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
সিইসি: বিষয়টা আমাদের কমিশনে খুব সিরিয়াসলি বিবেচনা করেছি। কমিশনের একটা সিদ্ধান্ত হলো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত কনসেনসাস (ঐকমত্য) ছাড়া নেই না। মেজরিটির মতামত নিয়েই করে থাকি। কারো ওপর চাপিয়ে দেই না কোনো কিছু। পাঁচজন মিলেই এই কমিশন।
আগে মাহবুব তালুকদার সাহেব একদিকে কথা বলতেন, বাকিরা অন্যদিকে বলতেন। আমাদের এখানে শুনেছেন আমরা দলাদলি করেছি কখনো?
এই ‘শাপলা‘ নিয়েও আমরা অনেক ইনভেস্টিগেট করেছি, বিষয়টা এক্সামিন করেছি। কিছু আইনি বিষয় আছে এখানে। ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ নিয়ে একটা আইনই আছে।
আরেকটা বিষয় আছে এখানে এনসিপি চেয়েছে, এর আগে নাগরিক ঐক্যও চেয়েছিল। ৮–১০ দিন আগে নাগরিক ঐক্যের একটা প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের মেইন ফোকাস হলো ‘শাপলা‘। তারা বলেছে আমরা শাপলা চেয়েছি আপনারা দেন নাই। আমরা ওদের আবেদন পেন্ডিং রেখেছি। উনারা বললেন যে দেখেন আমরা কিন্তু অনেক আগেই অ্যাপ্লাই করেছি, এনসিপি করেছে পরে। আমি একটা রেজিস্টার্ড দল। এনসিপি রেজিস্ট্রেশনই পায়নি।
আমাদের আইন অনুযায়ী যারা আগে ক্লেম করবে তাদের দিতে হয়, সুতরাং সুযোগটা সীমিত।
বিবিসি বাংলা: আপনাদের সিদ্ধান্ত কী তাহলে?
সিইসি: ওই যে বললাম, যদি দিতে হয় তাহলে নাগরিক ঐক্য‘কে দিতে হবে।
বিবিসি বাংলা: যারা আগে চেয়েছে তাদেরকে দেবেন? নাকি শাপলা প্রতীক দেবেন না?
সিইসি: কিছু আইনি ইস্যু আছে। এ জন্য কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘শাপলা‘ আমরা প্রতীক হিসেবে রাখবো না।
বিবিসি বাংলা: কেউ পাচ্ছে না তাহলে?
সিইসি: না কেউ পাচ্ছে না। আমাদের সিদ্ধান্ত তাই–ই।
এসএ