মঙ্গলবার, মে ১৩, ২০২৫
মঙ্গলবার, মে ১৩, ২০২৫

মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন সাতক্ষীরার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

আঠারো’শ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। প্রায় দুই শতাধিক বছর আগের পুরানো ঐতিহাসিক মসজিদটি স্থানীয়ভাবে মিয়ার মসজিদ হিসেবে পরিচিত। মূল নাম খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদ হলেও বর্তমানে এটি তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ নামেই বেশি পরিচিত।

দীর্ঘদিন অযত্ম আর অবহেলায় থাকার পর ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের অধীনে সম্প্রতি কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। তবে, দ্রুত সম্পূর্ণ সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল। তা না হলে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী থেকে মসজিদটি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা।

মোগল মনুমেন্টস অব বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থ দ্বারা প্রকাশিত হয় মৌলভী কাজী সালামতউল্লাহ খান বাহাদুর তেঁতুলিয়ার একজন ধার্মিক জমিদার ছিলেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় ব্রিটিশ শাসনামলের ডেপুটি কালেকটর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তিনি আঠারো শতকের দিকে মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সাল নিয়ে মতপার্থক্যও রয়েছে। ১৮১৮, ১৮২৫ কিংবা ১৮৫৮৫৯ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে।

মসজিদটি খুলনাপাইকগাছা সড়কের কোল ঘেঁষে তালা উপজেলা সদরের দুইতিন কিলোমিটার উত্তরে আঠারো মাইল অভিমুখে আঞ্চলিক সড়কের পাশে এক একর জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে। মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে প্রায় দুই একর আয়তনের একটি বিশাল দিঘী। মসজিদ থেকে সিড়ি গিয়ে মিশেছে দীঘির তলদেশে। মসজিদটিতে রয়েছে ৭টি দরজা। প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড়বিশিষ্ট ১২টি পিলারের ওপর মসজিদের ছাদ নির্মিত।

চুুনসুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ছয়টি বড় গম্বুজ এবং ৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার রয়েছে। এছাড়া ২৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চার কোনে আরও চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদের ভেতরে পাঁচটি সারিতে ৩২৫ জন ও মসজিদের বাইরের চত্বরে ১৭৫ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রত্মতাত্ত্বিক অধিদপ্তর তাদের আয়ত্তে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

মসজিদের সামনে তৈরি একটি প্লেটে লন্ডনপ্রবাসী মন্টি সিদ্দিকী (কাজী সালামতউল্লাহর বংশধর) নামের ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্যমতে, মসজিদটির সঙ্গে ১৮৪০৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার শাহজানী বেগম মসজিদ এবং ১৮৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

উল্লেখ্য যে, মসজিদের খুব কাছে রাস্তার অপর পাশের ‘সালাম মঞ্জিল’টিও সমসাময়িক কালে কাজী সালামত উল্লাহ সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তিনিসহ তার বংশধর বসবাস করতেন। সেটি এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া কাজী সালামতউল্লাহ শাহী জামে মসজিদ থেকে কোয়ার্টার মাইল উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট পুরাতন একটি শাহী জামে মসজিদ রয়েছে। যেটি স্থানীয়ভাবে ভাঙা মসজিদ নামে পরিচিত।

কাজী সালামত উল্লাহ খানের পূর্বশ্বরী কাজী নাজিবুল্লাহ খান ১৬২৮১৬৫৮ সালের দিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে মুসল্লী সংকুলান না হওয়ায় তারই বংশধর কাজী সালামত উল্লাহ খান পরে তেঁতুলিয়া বাজার এলাকায় তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদটি নির্মাণ করেন।

দীর্ঘদিন অযত্ম আর অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে থাকার পর বর্তমানে সেটির কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। তবে, মসজিদের বাউন্ডারি এলাকায় বহু অজানা ব্যক্তির কবরের চিহ্ন থাকলেও সেগুলো অরক্ষিত। এছাড়া মসজিদের সীমানা প্রাচীর ও গম্বুজসহ বেশ কিছু সংস্কার কাজ বাকী রয়েছে। মসজিদটি দ্রুত সম্পূর্ণ সংস্কারের দাবি সচেতন এলাকাবাসীর।

তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি সৈয়দ জোনায়েদ আকবর জানান, ইতিমধ্যে প্রত্মতত্ব বিভাগের অধীনে মসজিদটির বেশ কিছু সংস্কার কাজসহ রঙের কাজ করা হয়েছে। এখনও গম্বুজ ও সীমান প্রাচীরসহ বেশ কিছু সংস্কার কাজ বাকী রয়ে গেছে। তিনি এ সময় প্রত্মতত্ববিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাকী কাজ গুলো সংস্কার করার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেন।

তেঁতুলিয়ার শাহী মসজিদটি দেখতে যাওয়ার সহজ পথ হলো সাতক্ষীরাখুলনা মহাসড়কের নোয়াপাড়া বাজারে নেমে ভ্যানযোগে ৩ কিলোমিটার পূর্ব দিকে তেঁতুলিয়া বাজার অথবা সাতক্ষীরাখুলনা মহাসড়কের আঠারমাইল বাজারে নেমে বাস অথবা ভ্যানে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More