বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি‘র উদ্যোগে সাম্প্রতি আত্বপ্রকাশ করেছে তরুণ নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নতুন এ দল তাদের স্লোগান হিসাবে বেছে নিয়েছে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানটি এনসিপি‘র প্রায় সব শীর্ষ নেতার মুখে শোনা গেছে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হচ্ছে আলোচনা–সমালোচনা। স্লোগানটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছে প্রশ্নও!
কিন্তু এই স্লোগানটি কোথা থেকে এলো তা কি জানেন? যদি না জেনে থাকেন তবে চলুন জানা যাক।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ও স্বাধীনচেতা রাজনীতিবিদ মাওলানা হজরত মোহানী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য নাম। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানের প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত এই বিপ্লবী শুধু রাজনীতিতেই নয়, সাহিত্য ও সাংবাদিকতায়ও রেখেছেন অসামান্য অবদান।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকণ্ঠ মাওলানা হজরত মোহানী ১৮৭৫ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম– সৈয়দ ফজল উল হাসান। শিক্ষাজীবনে তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন মাওলানা মোহানী। প্রথমে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং পরে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে তিনি সর্বপ্রথম ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ বা ‘স্বরাজ’–এর দাবি তোলেন, যা পরবর্তীতে মহাত্মা গান্ধীসহ অন্যান্য জাতীয় নেতাদের আন্দোলনের মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে।
তিনি ছিলেন একজন শক্তিশালী লেখক ও সাংবাদিক। তার সম্পাদিত ‘উর্দু–ই–মুয়াল্লা’ পত্রিকা ব্রিটিশ সরকারের চোখে ছিল বিদ্রোহের প্রতীক। স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণে তাকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
মাওলানা হজরত মোহানীই প্রথম ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ (বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক) স্লোগানটি ব্যবহার করেন, যা পরবর্তীতে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান রণধ্বনি হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং এই স্লোগানকে আরও জনপ্রিয় করেন।
মাওলানা হজরত মোহানী শুধুমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী নন, তিনি ছিলেন মুক্তচিন্তার প্রতীক। একজন সুপ্রসিদ্ধ উর্দু কবি হিসেবেও তিনি বিশেষভাবে স্মরণীয়। তার লেখা প্রেমের গজলগুলো আজও উর্দু সাহিত্যে সমাদৃত। ১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতে তার মৃত্যু হয়।
এমবি/এসএ