এবছর ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব নাইটহুড ও সর্বোচ্চ পুরস্কার পিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশি শেখ আলিউর রহমান। একসঙ্গে দুটো পুরস্কার পাওয়া বিশ্বে এক অনন্য রেকর্ড। অতীতে ফিলিপাইনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব নাইটহুড বা নাইট অব রিজাল প্রাপ্তদের মধ্যে আছেন হেনরি কিসিঞ্জার, স্পেনের রাজা ডন জুয়ান কার্লোস এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রপতি এইচ.ই. মেসিকের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তার সঙ্গে এখন যুক্ত হলো শেখ আলিউরের নাম, যা বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম।
শেখ আলিউর রহমান লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের গ্রুপ চেয়ারম্যান, যা ইউরোপের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল চা কোম্পানি। তবে আলিউর নিজেকে কেবল ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং টেকসই ব্যবসার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠিত করেন গ্লোবাল ফেয়ার পে চার্টার বা ন্যায্য মজুরির সনদ। সনদটি ২০২৩ সালের শুরুতে জাতিসংঘের কাছে পেশ করা হয়। গতবছর ২২ মে লন্ডনের ম্যানশন হাউসে জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথ সনদটিতে স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।
শ্রমিক কল্যাণ এবং টেকসই ব্যবসার জন্য সনদের প্রতিটি শর্তকে সমর্থন দিয়ে তাতে স্বাক্ষর করেন লন্ডনের মেয়রসহ প্রভাবশালী নেতারা।
মূলত এর পরপরই ছড়িয়ে পড়ে আলিউরের ন্যায্য মজুরির সনদ। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে শেখ আলীউরের নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত ১৪টি দেশ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। ৫০ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যেই আলিউরের ন্যায্য মজুরির সনদ থেকে উপকৃত হয়েছে। এত অল্প সময়ে শ্রমিকদের কল্যাণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখায় ফিলিপাইন সরকার তার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাবের জন্য এবছর শেখ আলিউরকে মনোনীত করেছে। নাইটহুড বা নাইট অব রিজালের এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি ৯ ফেব্রুয়ারি ম্যানিলায় আলিউরের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে। একই সপ্তাহে শেখ আলিউর রহমান সিনো ফিল এশিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বা পিস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন।
শেখ আলিউর রহমান বিশ্বব্যাপী ন্যায্য বেতন সমর্থন ও বাস্তবায়নে তার অবদানের জন্য এই পিস অ্যাওয়ার্ড পাবেন, যা তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসাবে পুরস্কারটি পাচ্ছেন।
ফিলিপাইনের ম্যানিলায় প্রতিষ্ঠিত, সিনো ফিল এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যাওয়ার্ডস ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে পেশাদার, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, সাংবাদিক, নীতিনির্ধারকসহ শান্তির নেতাদের সম্মানজনক এই পুরস্কার দিয়ে থাকে, যা এশিয়ার নোবেল বলে পরিচিত। এর আগে ব্রিটেনে রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম নববর্ষের সম্মানের তালিকায় আলিউরকে ‘চা শিল্প এবং যুবকদের প্রতি সেবার জন্য ওবিই (অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) প্রদান করা হয়।
শেখ আলিউর রহমান সিলেটের সন্তান। সিলেট থেকেই মূলত চা শিল্পের প্রতি তার এমন ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা কেবল চা নিয়ে ব্যবসার করার জন্য নয়, বরং তিনি সবসময় চেয়েছেন এই শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তার এই ভাবনা থেকে গ্লোবাল ফেয়ার পে চার্টারের সৃষ্টি। জাতিসংঘের সহায়তাপুষ্ট মডেল চা বাগান বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন শেখ আলিউর রহমান। এই মডেল চা বাগান সারা বিশ্বকে দেখাবে কিভাবে টেকসই ব্যবসা দিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। আলিউর মনে করেন এই মডেল চা বাগান বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হলে মুখ থুবড়ে পড়া এখানকার চা শিল্প দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।