বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট চরমে, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট, যা ধারণ করেছে তীব্র আকার। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

আবদুল্লাহপুর, কুড়িল, বসুন্ধরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল এবং পল্টন এলাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন অপেক্ষমান শত শত যাত্রী, অথচ দেখা নেই বাসের। যে দুচারটি বাস যাচ্ছে তারও গেট লাগানো এবং যাত্রীতে ঠাসা, ওঠার নেই কোনো উপায়।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দেখা যায়, সড়কে বাস না চললেও রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এবং রামপুরা ব্রিজের শেষ প্রান্তে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। কেন তারা রাস্তায় নামেনি জানতে চাইলে এক বাসের হেলপার বলেন, নতুন নিয়মানুযায়ী বাস গোলাপি রঙ করতে অনেক বাসই নামেনি রাস্তায়। আর ইটিকেটিং চালু হলে ড্রাইভারহেলপার ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই বাকিরাও বাস নিয়ে রাস্তায় নামেনি।

গত সপ্তাহে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর রুটে রাজধানীতে চলাচল করা বাস গোলাপি রঙ করে ইটিকেটিং এর আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)

প্রাথমিকভাবে ২১ কোম্পানির ২ হাজার ৬১০ বাস গোলাপি রঙের ইটিকেটিংয়ের আওতাভুক্ত করা হলেও আগামীতে এ সংখ্যা এবং রুটের পরিধি আরও বাড়বে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

রঙ করার এ কার্যক্রমে দুই দিন ধরে আব্দুল্লাহপুরের এই রুটে রীতিমতো বাস সংকট দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি ট্রাফিক কার্যক্রম জোরদার করায় অনেকেই মামলার ভয়ে বাস নিয়ে বের হচ্ছেন না। অনেক ড্রাইভারহেলপার দাবি করছেন ইটিকেটিং ব্যবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।

অনাবিল বাসের চালক আলমগীর বলেন, ‘জায়গায় জায়গায় সার্জেন্ট আর চেকপোস্ট। রাস্তায় নামলেই শিওর মামলা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাস নিয়ে নামা যাবে তখন।’

এদিকে বাসের সংখ্যা কম থাকায় রাস্তায় বেড়েছে রিকশা আর বাইকের চলাচল। একদিকে অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, অন্যদিকে বেপরোয়া বাইকসব মিলিয়ে এই রুটে একটু পর পর সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে বের হয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, প্রায় আধাঘণ্টার ওপর দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি তিনি। রিকশা ভাড়া আকাশচুম্বী। সব মিলিয়ে হঠাৎ করেই রাস্তায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে পুরানা পল্টন যাবেন ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান। রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত হেঁটে এসে ভিড় ঠেলে কোনো রকমে রমজান বসে উঠেছেন। ভেবেছেন, কাকরাইল নেমে সেখান থেকে আবার হেঁটে পুরানা পল্টন যাবেন। কিন্তু ভয়াবহ যানজটের কারণে বাসটিকে চলতে হচ্ছে ঢিমেতালে। পরে মালিবাগমৌচাক নেমে আবার হাঁটা শুরু করেন তিনি।

সড়কে দুর্দশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় নেমে জানতে পারি ভিক্টর পরিবহনসহ কয়েকটি বাস চলছে না। যে কারণে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। কিন্তু গাড়ি উঠেও দেখা যাচ্ছে সেটা চলছে না। এতে উভয়সংকটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

এদিকে বাস সংকটের মধ্যেই রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুনর্বাসন এবং আর্থিক সাহায্যের দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন দুবাই ফেরত প্রবাসীরা। এতে করে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, বাংলামোটর, কাকরাইল এবং কাওরানবাজার এলাকাতেও বড় রকমের যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

সড়কে যানজট এবং বাসের সংখ্যা কেন কম সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেনি ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। ট্রাফিক বিভাগের উত্তরা জোনের সহকারী ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) ফজলুল করিম বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে আমরাও বাসের সংখ্যা কম পেয়েছে। কিন্তু কী কারণে রাস্তায় বাস কম সে ব্যাপারে এখনো পরিষ্কার জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অনেক বাস গোলাপি রঙের ইটিকেটিং এর আওতায় আসতে চাওয়ায় রঙ করতে দেয়া হয়েছে। এতে করে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বাস নেমেছে রাস্তায়।

বাড্ডা ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার শারমিন আক্তার বলেন, গোলাপি রঙের পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে অনেক বাসের হেলপার এবং ড্রাইভার ধর্মঘট করেছে। তাই তারা বাস নিয়ে রাস্তায় নামেনি। এতে করেও গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে শুরু কাউন্টার থেকে যাত্রী তোলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলার দাবিতে রাজধানীর সায়দাবাদ এবং যাত্রাবাড়ি এলাকায় দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করেছে বাস ড্রাইভারহেলপাররা। এতে করে এসব এলাকার যান চলাচল এক রকমের বন্ধ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে রাজধানীর সড়কে কোনো ভাঙাচূড়া আনফিট গাড়ি চলবে না। ধীরে ধীরে সব গাড়ি ইটিকেটিং এর আওতায় আনা হবে। এর প্রতিবাদে তুরাগ এবং বলাকা বাসের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছিল। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

টিকেটিং এর ডিভাইস সংক্রান্ত কাজের কারণে অনেক বাস সড়কে নামেনি। এছাড়া অনেকে বুঝে না বুঝে এ ব্যবস্থার বিরোধীতা করছে। যারা সড়কে বাস না নামিয়ে উল্টা রাস্তা অবরোধ করছে তাদেরকে কেউ খারাপ উদ্দেশ্য হাসিলে ইন্ধন দিচ্ছে বলে দাবি করেন সাইফুল।

ক্ষোভ জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এটা নতুন কিছু না। কোনো সিদ্ধান্ত বাস মালিকদের মন মতো না হলে তারা যাত্রী জিম্মির হাতিয়ার ব্যবহার করে। অন্যদিকে সরকার সিদ্ধান্ত দেয় ঠিকই কিন্তু মনিটরিং করে না। এতে করে সড়কে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। সরকারের উচিত মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।

দ্রুত সমস্যা সমাধান করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আনফিট গাড়ি, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, বাড়তি ভাড়া রাখা বন্ধ করতে সরকারের শক্তিশালী মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আল

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More