শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ৪৯তম ইমাম, প্রিন্স করিম আল–হুসাইনি আগা খান চতুর্থের জানাজা স্থানীয় সময় শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে পর্তুগাল ইসমাইলি সেন্টার লিসবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তাঁর পরিবার, ৫০তম শিয়া ইসমাইলি ইমাম প্রিন্স রহিম আগা খান পঞ্চম এবং ইসমাইলি সম্প্রদায়ের নেতারা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এছাড়া, আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন)-এর প্রতিনিধিরা ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ব নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পর্তুগাল প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সুসা, কানাডা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জর্ডান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, পর্তুগাল, কাতার, স্পেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
বিশ্বব্যাপী ইসমাইলি সম্প্রদায়ের সদস্যরা জামাতখানায় একত্রিত হয়ে জানাজার অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত দেখে তাদের ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মুসলিম রীতি অনুযায়ী, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আগা খান চতুর্থের কফিনটি একটি সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছিল, যাতে সোনালি রঙে তার ব্যক্তিগত প্রতীক খচিত ছিল। ইসমাইলি সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবীরা কফিনটি অনুষ্ঠানের স্থানে বহন করেন।
আগা খান চতুর্থের জন্ম ১৯৩৬ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে। শৈশবের প্রথম দিনগুলো তিনি কেনিয়ার নাইরোবিতে কাটান, এরপর তিনি সুইজারল্যান্ডে ফিরে যান এবং অভিজাত লে রোজি স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করেন।
১৯৫৭ সালে দাদা স্যার সুলতান মোহাম্মদ শাহ আগা খানের মৃত্যুর পর মাত্র ২০ বছর বয়সে ইসমাইলি শিয়া মুসলিমদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দাদা সুলতান মোহাম্মদ তার পুত্র প্রিন্স অ্যালি খানের পরিবর্তে প্রপৌত্র আগা খান চতুর্থকে উত্তরসূরি মনোনীত করেন।
আগা খান চতুর্থ ছিলেন বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ধর্মীয় নেতা। তিনি আনুমানিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সম্পদ রেখে গেছেন। ধর্মীয় নেতা হলেও তিনি রাজা–বাদশাহদের মতো বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। তার ব্যক্তিগত জেট বিমান, ২০ কোটি ডলারের সুপার ইয়ট এবং বাহামাসে একটি ব্যক্তিগত দ্বীপও ছিল।
একসঙ্গে চার দেশ—ব্রিটেন, ফ্রান্স, সুইডেন ও পর্তুগালের নাগরিকত্ব ছিল তার। বিশ্বব্যাপী উন্নয়নমূলক কাজের জন্যও তিনি পরিচিত ছিলেন। আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (AKDN)-এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বের দরিদ্র ও অনুন্নত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করেন।
আগা খান চতুর্থকে আগামীকাল (৯ ফেব্রুয়ারি) মিশরের আসওয়ানে দাফন করা হবে। তাকে তার দাদা স্যার সুলতান মোহাম্মদ শাহ আগা খান তৃতীয়ের সমাধির পাশে অস্থায়ীভাবে সমাহিত করা হবে। পরবর্তীতে নতুন একটি সমাধি নির্মাণ করা হবে, যা হবে তার চূড়ান্ত বিশ্রামস্থল।
এসএ