শনিবার, আগস্ট ২৩, ২০২৫
শনিবার, আগস্ট ২৩, ২০২৫

এবি পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নির্বাচনী বিতর্ক: কী বললেন প্রার্থীরা?

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলীয় নির্বাচনী বিতর্ক আয়োজন করেছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এই বিতর্কে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তিন নেতা অংশ নেন।

প্রার্থীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অতীত অবদান এবং প্রার্থিতার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। এ সময় তারা দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ঐক্য বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিতর্কটি পরিচালনা করেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাবেদ ইকবাল। এতে অংশ নেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক এ এফ সোলায়মান চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন এবি পার্টির প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. ওয়ারেসুল করিম।

গত ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবি পার্টির জাতীয় নির্বাহী পরিষদের ২১ পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিতর্কে তিন প্রার্থী তাদের বক্তব্যে দলের ২,৭০০ কাউন্সিলরদের সামনে নিজেদের লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

কেন প্রার্থী হয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তরের

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘চার বছরে দল গঠনের সময় নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। সরকারের বাধা, গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি, এবং সামাজিক মাধ্যমে বুলিং—সবই সহ্য করেছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি।

এ এফ সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘আমি দলের আহ্বায়ক পদ ছেড়েছি, যাতে নির্বাচন প্রভাবিত না হয়। এবি পার্টি একক ব্যক্তির দল নয়। পদত্যাগের পর দেখেছি, দল ভালোভাবেই চলছে। তাই প্রার্থী হয়েছি।

কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, ‘রাজনীতিতে নতুন হলেও পেশাগত অভিজ্ঞতায় আমি অন্য দুই প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ১০ বছর জেল খেটেছি। দলকে এগিয়ে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

কেন নেতাকর্মীরা আপনাকে ভোট দেবেন? এই প্রশ্নের উত্তরের

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের কারণে তারা আমাকে ভোট দেবেন বলে আশা করছি।

এ এফ সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে আড়াই শতাধিক উপজেলায় কমিটি করেছি। আগামী তিন বছরে এবি পার্টিকে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখতে চাই।

কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে আমি সক্রিয় ছিলাম। গুলির মুখোমুখি হয়েছি। আমার নেতৃত্বে ১ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের মিছিল হয়। এই অভিজ্ঞতা আমার প্রতি নেতাকর্মীদের আস্থা বাড়াবে।

দল ও দেশ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? এই প্রশ্নের উত্তরের

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘পরবর্তী ১২ বছরে এবি পার্টিকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। হয় সরকারে, নয়ত প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চাই।

কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, ‘আমি প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত দলকে সংগঠিত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করব। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ এফ সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘জোট নির্ভর করবে দলের শক্তির ওপর। আমরা ছোট দল হিসেবে জোট করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাই না। আমাদের নিজস্ব অবস্থান মজবুত করাই প্রধান লক্ষ্য।

ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা, পানি বণ্টনসহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর সহায়তা নিতে হবে। আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি অনুসরণ করব, তবে বৈরীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলব।

দলকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পরিকল্পনা কী? এই প্রশ্নের উত্তরের

কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, ‘দলের প্রতিটি স্তরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া গেলে নারী পদায়ন বাড়ানো হবে।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রার্থী দিতে চাই।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি কিনা? জানতে চাইলে

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন নতুন। এই তুলনায় নির্বাচন কমিশন ভালো কাজ করেছে।

সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাজ খুব ভালো।

কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে পুরো নম্বর দিতে চাই।

তিন প্রার্থীই জানান, যে বিজয়ী হোক, তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে। দল কারো একার নয়; এটি সবার। ফলাফল দলের ঐক্য আরও মজবুত করবে।

এবি পার্টির প্রথম দলীয় নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রতি একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রার্থীদের বক্তব্য ও বিতর্ক থেকে স্পষ্ট, দলটি ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। আগামী ১০ জানুয়ারির ভোটে কে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More