ভারতে জি–টোয়েন্টি সম্মেলন শেষে আগামীকাল রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
৩৩ বছর পর বাংলাদেশে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের এটিই হবে প্রথম সফর। এর আগে ১৯৯০ সালের ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট মিতেররান্ড।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফরে বাণিজ্যিক, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিষয় প্রাধান্য পেলেও সময় ও ভূ–রাজনৈতিক কারণে এটিকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, একদিকে এই সফরের মাধ্যমে ইউরোপের একটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের যেমন একটি সম্ভাবনা তৈরি হবে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সুবিধা আদায়ের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর দীপ্ত নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষাসহ সব দিক থেকে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর এই সফরটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার ফ্রান্স। অন্যদিকে ২০২১ সালে দুই দেশ একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
ফ্রান্স বর্তমানে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে এবং এই অঞ্চলের ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্স–বাংলাদেশ সম্পর্ক যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তিন বিলিয়ন ইউরোর বেশিতে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে ফ্রান্সে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
এছাড়া, চলতি বছরের জুলাইয়ের শুরুতে ফরাসি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ চট্টগ্রামে শুভেচ্ছা সফর করে এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুয়ের একটি বিবৃতি দেন। মূলত, এসবের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের বৃহত্তর অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্বকেও স্বীকার করে নেয় ফ্রান্স।
সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়:
২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সময়ে যৌথ বিবৃতিতে সম্পর্ক উন্নীত করার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এবারের সফরে কৌশলগত উপাদান আছে– এমন কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এয়ারবাস থেকে একটি স্যাটেলাইট কেনার প্রস্তাবেও সাড়া দিতে পারে বাংলাদেশ এবং এ বিষয়ে একটি চুক্তিও হতে পারে। অন্যদিকে ফ্রান্সের সাহায্য সংস্থা এএফডি থেকে ২০ কোটি ডলার সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অ্যারোনোটিকস খাতে ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের এবং এয়ারবাস থেকে ১০টি বিমান ক্রয় করা নিয়েও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি থাকতে পারে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জোরালো সহায়তার বিষয়ে ফ্রান্সকে অনুরোধ করবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ইন্দো–প্যাসিফিকে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশিদের স্কলারশিপসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ