বিগত ২০২৪ সালে ৬৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত ও ১২৬০৮ জন আহত হয়েছে। এছাড়া রেলপথে ৪৯৭টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত ও ৩১৫ জন আহত এবং নৌ–পথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ রয়েছে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে রাজধানী সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ১.৫৪ শতাংশ, নিহতের সংখ্যা ৭.৫০ শতাংশ এবং আহতদের সংখ্যা ১৭.৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ২০২৩ সালের তুলনায়। এছাড়া, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ বছর মোট ২৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৭০ জন নিহত এবং ৩১৫১ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬.৬২ শতাংশ, নিহতের ৩০.০৮ শতাংশ এবং আহতের ২৪.৯৯ শতাংশ। সড়ক, রেল ও নৌ–পথে মোট ৬৯৭৪টি দুর্ঘটনায় ৯২৩৭ জন নিহত এবং ১৩১৯০ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গত বছরের দুর্ঘটনায় ৯৭১৭টি যানবাহন জড়িত ছিল, যার মধ্যে ১৩.৪৫ শতাংশ ছিল বাস, ২৩.৩৩ শতাংশ ট্রাক–পিকাপ–কাভার্ডভ্যান ও লরি, ২৭.৪৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬.৫৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫.৫৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭.৩৭ শতাংশ নছিমন–করিমন–মাহিন্দ্রা–ট্রাক্টর এবং লেগুনা। মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দুর্ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়েছে, কিন্তু গণমাধ্যমে এসব দুর্ঘটনার সংবাদ যথেষ্ট আসছে না, ফলে প্রকৃত চিত্র সবার সামনে আসছে না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার ২২টি কারণ তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে—বেপরোয়া গতি, বিপদজনক অভারটেকিং, সড়কের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, চালক ও যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতা, অরক্ষিত রেলক্রসিং, ফুটপাতের অভাব বা বেদখল, ট্রাফিক আইনের দুর্নীতি, চালকদের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টার সুনির্দিষ্ট না থাকা, এবং বিশেষত টুকটুকি, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরশীল গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ঝোঁক, যার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দাবি করেন, ‘সরকার পরিবর্তন হলেও পরিবহন কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু সভা, সমাবেশ এবং বক্তৃতার মাধ্যমে কিছুই সম্ভব নয়। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল, আইন প্রয়োগের দুর্নীতি এবং বিআরটিএ‘র রাজস্ব আদায়ে ব্যস্ততা চলছেই।‘
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সমাজ উন্নয়নকর্মী আবদুল্লাহ আল–জহির স্বপন, যাত্রী কল্যাণ সমিতি সহ–সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল এবং দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের মো. জিয়াউল হক চৌধুরী।
এমবি/এসএ