শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

যেসব ভেন্যুতে হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

১ জুন থেকে শুরু হয়েছে আইসিসি টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। যৌথভাবে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সর্বমোট ৫৫ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের এই টুর্নামেন্ট চলবে আগামী ২৯ জুন পর্যন্ত।

নির্ধারিত ৯টি ভেন্যুর মধ্যে তিনটি ইউএসএরটেক্সাস, নিউইয়র্ক, এবং ফ্লোরিডায়। আর ছয়টি ক্যারিবিয়ান ভেন্যুঅ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা, বার্বাডোস, গায়ানা, সেন্ট লুসিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্স।

চলুন, আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ আয়োজনকারী স্টেডিয়ামগুলোর অবস্থান ও এর আশেপাশের পর্যটন স্থানগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক

 

. গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, টেক্সাস

২০০৮ সালে চালু হওয়া এই স্টেডিয়ামটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেসবল খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এর মাঝে ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সকার ইউনাইটেড সকার লিগ২ এখানে তাদের ম্যাচগুলো মঞ্চস্থ করে। এরপর সংস্কারের পর ২০২৩ সালে মাঠটিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ। টেক্সাসের ডালাস কাউন্টির গ্র্যান্ড প্রেইরি শহরের লোন স্টার পার্কওয়েতে অবস্থিত মাঠটির বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার।

হলিউডের ওয়েস্টার্ন ছবির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পাওয়া ডালাস কাউবয়ের দেখা মিলবে ডাউনটাউন থেকে ১৩ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের টেক্সাস হর্স পার্কে। অদ্ভূত এক ঐতিহাসিক দিগন্তের দেখা পাওয়া যাবে ডিলি প্লাজার ষষ্ঠ তলা জাদুঘর, জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি ও মিউজিয়ামে। এছাড়া রিইউনিয়ন টাওয়ার জিওডেকের ১৭০মিটারউচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমগ্র ডালাসের দৃশ্য সত্যিই শ্বাসরুদ্ধকর!

পেরোট মিউজিয়াম অব ন্যাচার অ্যান্ড সায়েন্সের অসাধারণ রত্ন সংগ্রহ এবং ডাইনোসর একচেটিয়াভাবে আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।

 

. নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, নিউ ইয়র্ক

৩৪ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সদ্যনির্মিত এই ক্রিকেট গ্রাউন্ড মূলত সর্বাঙ্গীনভাবে একটি মডুলার স্টেডিয়াম। ৩ জুন শ্রীলঙ্কা বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট লড়াইয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে এই ভেন্যুর প্রথম ম্যাচ। মডুলার অবকাঠামোর এই অতিকায় মাঠটির অবস্থান নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের ইস্ট মেডোতে আইজেনহাওয়ার পার্কের মাঠে।

এর আশেপাশে ভ্রমণের জন্য প্রথমেই যাত্রা শুরু করতে হবে লং বিচ থেকে। এই সৈকতে পাওয়া যাবে সার্ফিংসহ বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কার্যকলাপের সুযোগ। ক্যাপট্রি স্টেট পার্কে নৌকা ভাড়া ফায়ার আইল্যান্ড ভ্রমণের সময় মাছ ধরা যায়। তবে রোমাঞ্চের ষোল আনা পূর্ণ হবে পায়ে হেঁটে ৩০০ বছরের পুরনো বন সানকেন পেরুনোর সময়।

সামার হোয়াইট হাউস, ওয়াশিংটন স্পাই ট্রেইল এবং গোল্ড কোস্ট ম্যানশনগুলোকে অনুসরণ করার সময় পশ্চিমের পুরো অতীতটা রীতিমতো লাফ দিয়ে চোখের সামনে এসে দাঁড়াবে। বলাবাহুল্য যে, স্ট্যাচু অব লিবার্টি এবং এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং দেখে না এলে এই ভ্রমণটা পুরো বৃথাই যাবে।

 

. সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্ক এবং ব্রোওয়ার্ড কাউন্টি স্টেডিয়াম, ফ্লোরিডা

এই লডারহিল ভেন্যু হলো সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ইউএস ক্রিকেট ভেন্যু, যা উন্মুক্ত করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ৯ নভেম্বর। এটি ফ্লোরিডার লডারহিলের একটি বৃহৎ কাউন্টি পার্ক এবং ইউএসএর প্রধান দুটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি। স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার।

গ্রেটার ফোর্ট লডারডেলের ৩৭ কিলোমিটার সোনালি তীরবর্তী অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করা যায় ৮টি উপকূলবর্তী শহরে। এখানকার আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ঘাসের নদী’ নামে খ্যাত জলাবদ্ধ তৃণভূমিতে কুমির দেখা, বাটারফ্লাই ওয়ার্ল্ডের বিশ্বের বৃহত্তম প্রজাপতি বাগান এবং হামিংবার্ড।

দক্ষিণে গেলে চোখে পড়বে প্রাণবন্ত মিয়ামি শহরের আদিম সমুদ্র সৈকত। এ পথে হাজির হবে আফ্রোঅ্যামেরিকান ইতিহাস সমৃদ্ধ ওভারটাউন, সাউথ ডেডের মিকোসুকি নেটিভআমেরিকান সংস্কৃতি এবং লিটল হাভানার কিউবান সম্প্রদায়।

 

. স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম, অ্যান্টিগুয়া এবং বার্বুডা

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ নাম স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের নামানুসারে নামকরণ হয়েছে এই স্টেডিয়ামটির। এর গোড়াপত্তন হয়েছিল ২০০৭ সালে তৎকালীন ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপকে উদ্দেশ্য করে। সেন্ট জর্জের নর্থ সাউন্ডে অবস্থিত স্টেডিয়ামটিতে ১০ হাজার লোকের জায়গা দিতে পারে।

এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে পর্যটকদের প্রথম আকর্ষণ হচ্ছে সেন্ট জর্জ প্যারিস চার্চ। এই অ্যাংলিকান চার্চটি স্থাপিত হয়েছিল ১৭৮৪ সালে। এরপরেই দেখা যেতে পারে ২০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির অর্কিডসমৃদ্ধ অর্কিড ওয়ার্ল্ড। প্রশান্তিদায়ক বাগানগুলো প্রদর্শন করতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায়। পুরনো আমলে ঘরবাড়ি দেখার জন্য সেরা জায়গা হচ্ছে ফ্রান্সিয়া প্ল্যান্টেশন হাউস। এটি প্রাচীনতম মানচিত্র সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত।

 

. কেন্সিংটন ওভাল, বার্বাডোস

১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কেন্সিংটন ওভালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৫ সালে। বার্বাডোসের ব্রিজটাউনের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে ২৮ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধারণক্ষমতা ওভালকে ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভেন্যুতে পরিণত করেছে।

এই দ্বীপাঞ্চলটির পশ্চিম দিকে রয়েছে কার্লাইল বে, যেটি সূর্যাস্ত দেখার জন্য জনপ্রিয় স্থান। তুষারশুভ্র বালি ও ঢেউ খেলানো তালগাছের এই সৈকত ইউনেস্কো মনোনীত মেরিন পার্কের অংশ।বার্বাডোসের এই অঞ্চলটাতে পাওয়া যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা সব খাবারগুলো। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশতেই রয়েছে মাছের আধিক্য। বিশেষ করে বাজান এবং গ্রিলড মাহি মাহি এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার। বার্বাডোস মিউজিয়াম ও হিস্টোরিক্যাল সোসাইটি ভ্রমণের সময় দেখা মিলবে ৫ লক্ষেরও বেশি পুরনো স্থাপত্যের নিদর্শন।

আইসিসি টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ আসরের সমাপনী খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে।

 

. প্রোভিডেন্স স্টেডিয়াম, গায়ানা

২০০৭ সালে বোর্ডা বা জর্জটাউন ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডটি পুনর্স্থাপন করে বানানো হয় প্রোভিডেন্স স্টেডিয়াম। এটি নির্মিত হয়েছিল তৎকালীন ক্রিকেট বিশ্বকাপের সুপার এইট ম্যাচ আয়োজনের জন্য। গায়ানার ডেমিরারামাহাইকা অঞ্চলের প্রোভিডেন্সে অবস্থিত এই ভেন্যুতে ২০ হাজার আসনের ব্যবস্থা রয়েছে।

গায়ানার অত্যাশ্চর্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রাল, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু কাঠের বিল্ডিংগুলোর একটি। এর গথিকশৈলী, সূক্ষ্ম নকশার কাঁচের জানালা, অদ্ভুত বেদী এবং কাঠের খিলানযুক্ত সিলিং দর্শনার্থীদের বিস্ময়ের খোরাক জোগায়।

জর্জটাউন বোটানিক্যাল গার্ডেনে স্বাগত জানাবে বিচিত্র ধরনের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদ। শাপলা পুকুর, পাম এবং অর্কিড দেখতে দেখতে হেঁটে যাওয়ার সময় চমকে দিতে পারে নাম না জানা পাখিরা।গায়ানার স্থানীয় সঙ্গীতের সুধা নিতে যেতে হবে রয় গেডেস স্টিল প্যান মিউজিয়ামে। এখানকার স্টিলের প্যানের সংগ্রহে মিশে রয়েছে গায়ানার বিবর্তনের ইতিহাস।

 

. ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, সেন্ট লুসিয়া

এই মাঠটির সঙ্গে মিশে রয়েছে ২০১২ এবং ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরপর ২ বার আইসিসি টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের ইতিহাস। প্রথমে ২০০২ সালে উদ্বোধনের সময় পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলোর নামানুসারে এর নাম রাখা হয়েছিল বিউসজোর ক্রিকেট গ্রাউন্ড। কিন্তু পরবর্তীতে সেই দুটি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক অলরাউন্ডার ড্যারেন স্যামির সম্মানে ২০১৬ সালে মাঠটির নাম পরিবর্তন করা হয়।

সেন্ট লুসিয়ার গ্রস আইলেটের কাছে অবস্থিত এই মাঠটির ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার। স্টেডিয়ামটি রডনি বেএর পর্যটন রিসোর্টের উত্তরপূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বিলাসবহুল ইয়ট এবং পালতোলা জাহাজে সব সময়ই ব্যস্ত থাকে রডনি বে মেরিনা। এখানে রয়েছে স্থানীয় রন্ধনশিল্পের দর্শনধারী বাহারি সব রেস্তোরাঁ।

পিজিয়ন আইল্যান্ড ন্যাশনাল পার্কে ঢোকার পর থেকে সামনে পড়বে ফোর্ট রডনিসহ ঐতিহাসিক সব সামরিক ধ্বংসাবশেষ। এর সঙ্গে উপকূলের নজরকাড়া দৃশ্যে চোখ রেখে নৈসর্গিক ট্রেইল ধরে চলে যাওয়া যাবে সিগন্যাল পিক পর্যন্ত।

 

. ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমি, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো

২০১৭ সালে চালু হওয়া এই স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়ক ব্রায়ান লারার নামে। লারা ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকালের শীর্ষস্থানীয় রান সংগ্রহকারী ছিলেন। দক্ষিণ ত্রিনিদাদের সান ফার্নান্দোর উপকণ্ঠের তারৌবাতে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে আসন রয়েছে মোট ১৫ হাজার।

ত্রিনিদাদের নান্দনিক সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে ওয়েস্টার্ন মেইন রোড ধরে গেলে। এখানে রাস্তার পাশের খাবারের দোকানসহ রয়েছে রঙিন বাজার। স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি এই দোকানগুলো স্যুভেনির কেনার জন্যও বেশ উপযুক্ত।

কুইন্স পার্ক সাভানার চারপাশ জুড়ে গাছগাছালি এবং নানা ঐতিহাসিক নিদর্শনের বেষ্টনী। এছাড়াও রয়েছে ঔপনিবেশিক যুগের প্রাসাদ এবং রাজকীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন।

 

. আর্নোস ভ্যালে স্টেডিয়াম, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্স

১৯৮১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় স্টেডিয়ামটি। সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনের কাছেই অবস্থিত আর্নোস ভ্যালের ধারণক্ষমতা ১৮ হাজার।

এখানকার কাছাকাছি পর্যটন স্থানের মধ্যে রয়েছে কিংসটাউন বোটানিক্যাল গার্ডেন। বেশ পুরনো আমলের হলেও এখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছপালা এবং ফুলগুলো সুবিন্যস্ত করে সাজানো। এগুলোর মাঝে শোভা পায় বিখ্যাত ব্রেডফ্রুট গাছ।

১৮ শতকের একটি সুসংরক্ষিত ঐতিহাসিক দুর্গ কিংসটাউনের ফোর্ট শার্লট। অদূরে উপকূলরেখার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য হাতছানি দিয়ে ডাকে। অন্যদিকে প্রাচীর এবং কামানগুলো মনে করিয়ে দেয় দ্বীপের ঔপনিবেশিক অতীতের কথা। সেই আবহ হৃদয়ে ধারণ করেই প্রবেশ করা যেতে পারে সামরিক যাদুঘরে।

 

উল্লেখ্য, ২০২৪ আইসিসি পুরুষ টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজনকারী এই স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রাচীন কেন্সিংটন ওভাল।

 

এসএ/দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More