বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিল ঢাকায় গত ৩ ডিসেম্বর, ২০২২– এ ডিলার্স কনফারেন্সের আয়োজন করে।
দেশব্যাপী সত্তরটিরও অধিক শোরুমের মাধ্যমে কোম্পানিটি বেশ সফলতার সাথে ক্রেতাদের সমসাময়িক আসবাবের চাহিদা মিটিয়ে চলছে এবং দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। অতি সম্প্রতি, ভারতে চালু হয় হাতিলের ২৮তম শোরুম। হাতিল একমাত্র বাংলাদেশি ব্র্যান্ড যার বিদেশের মাটিতে নিজ নামে সর্বোচ্চ সংখ্যক আউটলেট রয়েছে।
অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বাণিজ্য মন্ত্রী, জনাব টিপু মুন্সি এমপি। এই অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাতিল–এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সেলিম এইচ রহমান। এছাড়াও, সম্মানিত পরিচালক জনাব মাহফুজুর রহমান, জনাব মিজানুর রহমান, জনাব মশিউর রহমান এবং জনাব সফিকুর রহমান এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশ থেকে ১০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
অংশগ্রহণকারীগণ চলমান অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশের সার্বিক ব্যবসায়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ আর্থ–সামাজিক প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করা হয়।
জনাব সেলিম এইচ রহমান বলেন, “ করোনা মহামারী মোকাবেলা করে দেশের ফার্নিচার শিল্প সফলতার সঙ্গে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে রয়েছে সরকারের আন্তরিকতা, ফার্নিচার শিল্পের উদ্যোক্তাদের নিষ্ঠা এবং দেশের ক্রেতা–সাধারণের অকুন্ঠ সমর্থন। প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে যারা এখনও এই সম্ভাবনাময় শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন তাদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভ কামনা।“
“দেশের এই শিল্পখাতটির যে বিপুল সম্ভবনা রয়েছে, বিশ্ববাজারে তার খুব সামান্য অংশেরই বাস্তবায়ন ঘটেছে এখন পর্যন্ত। ২০২১ সালে গ্লোবাল ফার্নিচার মার্কেটের সাইজ ছিল প্রায় ৬৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২২ সালে এই মার্কেটর সাইজ ধারণা করা হয় প্রায় ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত কয়েক বছর বিশ্বজুড়ে ফার্নিচার ব্যবহারের ট্রেন্ড দেখলে বুঝা যায় যে প্রতিবছরই এই মার্কেট বড় হচ্ছে।
২০২১–২০২২ অর্থবছরে আমাদের ফার্নিচার রফতানির পরিমাণ ছিল ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় এটা ৩৯% ভাগ বেশী, তারপরেও অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এই খাতের উন্নয়নের গতি এখনও মন্থর আমাদের দেশে। কারণ, কোন ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প গড়ে না ওঠার কারণে আমাদের ফার্নিচার শিল্পে ব্যবহৃত বেশির ভাগ কাঁচামাল যেমন Hardware, Lacquer, Fabrics দেশের বাইরে থেকে আমাদানী করতে হয়।
দেশের বাইরে থেকে আমদানী করতে গেলে বড় অংকের আমদানী–কর প্রযোজ্য হয়। একারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে চীন এবং ভিয়েতনামের সাথে আমাদের অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক পণ্যের মূল্য বাজারে টিকে থাকতে এবং মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি আমাদের আসবাবপত্র খাতকে রফতানির জন্য বন্ড সুবিধা দেয়া হয়, কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়, লজিস্টিক খরচ কমানো যায় এবং আসবাব রফতানি ইনসেন্টিভ ১৫% থেকে বাড়িয়ে ২৫% করা যায়, তাহলে এই খাতটি চীন, ভিয়েতনাম সহ অন্যান্য আসবাবপত্র উৎপাদনকারী দেশগুলির সাথে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে থাকবে।
এই ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা ২০১৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আসবাবপত্র সরবরাহ করে আসছি। গুণগতমান এবং ফিনিশিংয়ের কারণে ক্রেতারা সবসময়েই আমাদের পণ্যগুলো পছন্দ করছে। ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় আমরা আমাদের শোরুমের সংখ্যা সম্প্রসারিত করছি। এছাড়াও নতুন নতুন বাজার তৈরির লক্ষে আমরা বাংলাদেশ, দুবাই, ভারত ও থাইল্যান্ডে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করছি। আমাদের যে উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে, তা দিয়ে সর্বোত্তম গুণগতমান বজায় রেখে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা মাননীয় মন্ত্রী এই বিষয়গুলো সদয় বিবেচনায় নিবেন এবং এই শিল্পকে বিশ্ববাজারে মজবুত অবস্থানে পৌছাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” জনাব সেলিম এইচ রহমান বলেন।
জনাব মশিউর রহমান বলেন, “করোনাকালীন সংকট আর সাম্প্রতিক ইউক্রেইন–রাশিয়ার মধ্যকার বিরোধ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকে চরমভাবে অস্থিতিশীল করে তুলেছে যা অন্যান্য ব্যবসায়ের পাশাপাশি আসবাব শিল্পকেও ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করছে এবং আমরা আসবাবের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি যা দেশীও এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এমতাবস্থায়, আমাদের উচিৎ ব্যবসায়ের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া, সঠিক নেতৃত্ব নিশ্চিত করা, পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখা এবং সর্বোপরি ক্রেতা সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা। “প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সহজলভ্য করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে হাতিল ফার্নিচার অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেন হাতিল ফার্নিচার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সেলিম এইচ রহমান।
প্রায় তিন যুগের পুরনো এই ব্রান্ডটি আজকে বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্বস্ত ফার্নিচার ব্র্যান্ড। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডটি সমসাময়িক স্টাইল, উদ্ভাবনী ডিজাইন আর বিশ্বমানের ফার্নিচার নিয়ে সব সময়েই ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে। আর এই উদ্ভাবনী ডিজাইনগুলোই হাতিলকে করেছে অনন্য।
এই গল্পের শুরু হয়েছিল ১৯৬৬ সালে, যখন জনাব হাবিবুর রহমান পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে এইচ.এ. টিম্বার ইন্ডাস্ট্রিজের গোড়াপত্তন করেন। তার ছেলে জনাব সেলিম এইচ রহমান এই ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। ফ্যাক্টরিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ও সংযোজন এর বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
প্রতি বছর নতুন নতুন আউটলেট খোলার মাধ্যমে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে হাতিল। বর্তমানে, ব্র্যান্ডটি সারা বাংলাদেশে ৭০ টিরও অধিক শোরুম পরিচালনা করে এবং মিজোরাম, মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র এবং পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর এবং চণ্ডীগড় সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শোরুম রয়েছে।
পাশাপাশি ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে দুটি শোরুম রয়েছে। হাতিল তার পণ্য কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং ইউরোপেও রপ্তানি করে।