শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইব্রাহিম রাইসি

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

ইব্রাহিম রাইসি ইরানের রাজনীতি এবং বিচার ব্যবস্থার অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার জীবন এবং কর্ম ইরানের বিচারিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার কার্যকালের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্য ও বিতর্কিত কার্যক্রমের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ইব্রাহিম রাইসি ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইরানের মাশহাদে জন্মগ্রহণ করে। ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় পরিবেশে বড় হন। তিনি কুম শহরের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামি ফিকহ এবং আইন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই শিক্ষা তার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাকে ইরানের বিচারিক ব্যবস্থায় দ্রুত উন্নতি করতে সহায়তা করে।

রাইসি তার পেশাগত জীবন শুরু করেন বিচার বিভাগে এবং দ্রুতই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি উপপ্রধান বিচারপতি হিসেবে কাজ করেন এবং বিচার ব্যবস্থায় তার কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত হন। রাইসি ২০১৪ সালে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত হয়ে ইরানের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেন এবং আইনি কার্যক্রম তদারকি করেন। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি বিচারিক সংস্কার শুরু করেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেন।

রাইসি ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু হোসেন রুহানির কাছে পরাজিত হন। তবে, ২০২১ সালে তিনি পুনরায় নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ৬২.৯% ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। এই নির্বাচন অনেকেই মনে করেন রাইসির পক্ষে প্রভাবিত করা হয়েছিল, কারণ তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাকে প্রায়ই খামেনির পরবর্তী উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয়।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাইসির নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। দীর্ঘমেয়াদী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি সংকটে ছিল। রাইসির প্রশাসন এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মোকাবিলার চেষ্টা করে এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনার প্রচেষ্টা করে। তার সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থবির হয়ে যায়। ২০২২ সালের শেষের দিকে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে বড় ধরনের প্রতিবাদ হয়। রাইসির সময় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে সমর্থন দিয়েছে। এছাড়া, ইরান গাজার সংঘাতে ইসরায়েলের উপর হামলা চালায় এবং হিজবুল্লাহ ও হুথি আন্দোলনের মতো গোষ্ঠীগুলিকে অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে।

রাইসির জীবনে বিতর্কের অভাব ছিল না। ১৯৮৮ সালে রাজনৈতিক বন্দীদের গণহত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি “তেহরানের কসাই” নামে পরিচিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল অফিস তাকে নিষিদ্ধ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদকরা তাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে।

ইব্রাহিম রাইসির জীবন ও কর্ম ইরানের বিচারিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার কঠোরপন্থী নেতৃত্ব, বিতর্কিত অতীত এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার সময়কাল ইরানের ভবিষ্যতের পথে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। তার মৃত্যুর ঘটনাটি ইরানের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটিয়েছে, তবে তার উত্তরাধিকার ও প্রভাব অনেক দিন ধরে থাকবে।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More