সার্জন্টে, গুলি কর ভয় পেয়েও না। (হুকুমের গোলাম) হত্যাকারীর ইতম্ততা দেখে এই কথা বলার পরও রিভালবাররে ট্রিগার চাপ দিতে পারেনি। পারবেই বা কি করে একজন আর্দশের লড়াই করা যোদ্ধা আরেকজন হুকুমের গোলাম।
পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বয়োজ্যেষ্ঠ চে। ১৯২৮ সালের ১৪জুন এর্নেস্তো গেভারা রোসারিও, আর্জেনটিনায় জন্ম গ্রহণ করেন।
শৈশব থেকেই সমাজের বঞ্চিত, অসহায়, দরিদ্রদের প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ তার ভেতর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ছিল। শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে ভাল থাকায়। রাগবি ইউনিয়নের একজন অতি আগ্রহী সদস্য ছিলেন।

চে গুয়েভারা
রাগবি খেলার ক্ষিপ্রতার জন্য তাকে “ফিউজার” (fuser) নামে ডাকা হত। তরুণ বয়সে মেডিকেল ছাত্র হিসেবে চে সমগ্র লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেন। অঞ্চলের সর্বব্যাপী দারিদ্র্য তার মনে গভীর রেখাপাত করে।
সম্রাজ্যবাদ ও একচেটিয়া পুজিবাদ, নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদের কারণে অর্থনৈতিক বৈষম্যকে মোটা দাগে খুজে পান।
১৯৫৪ সালে সিআইএ–এর ষড়যন্ত্রে গুজমানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে চে–র বৈপ্লবিক আদর্শ চেতনা বদ্ধমূল হয়। পরবর্তীকালে মেক্সিকো সিটিতে বসবাসের সময় রাউল ও ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে আলাপ হয়।
মার্কিন মদতপুষ্ট সরকারকে উৎখাতের জন্য সমুদ্রপথে কিউবায় প্রবেশ করেন। চে বিপ্লবী সংঘের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
সেকেন্ড–ইন–কম্যান্ড পদে তার পদোন্নতি হয় এবং বাতিস্তা সরকারকে উত্খাত করার লক্ষ্যে দুই বছর ধরে চলা গেরিলা সংগ্রামের সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর চে–কে ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর গ্রেফতার করে এবং তাঁর মৃত্যু হয় ৯ অক্টোবর দুপুর ১টা ১০ মিনিট নাগাদ।
১৯৬৭ সালের এই দিনটিতে লা হিগুয়েরা নামক স্থানে নিরস্ত্র অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয় বন্দী চে গেভারাকে।
শেষ পযন্ত “একভদ্র” কর্নেল এসে তার বন্দুক দিয়ে বুকের বা পাশে গুলি করে যোদ্ধা দেহকে নিঃপ্রাণ করেন। যার নাম এর্নেস্তো চে গুয়েভারা। স্বাধীনতাকামী মানুষের উজ্জল আর্দশ। যার আর্দশে ধারন করে জীবন দিতে ভয় পায় না কোন যোদ্ধা। জীবন জয়ের সংগ্রামের ধ্রুবতারা।

চে গুয়েভারা
ডাক্তারি পড়াশুনা শেষে, কিউবার স্বৈরাতন্ত্রী সরকার ফুলজেনসিও বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুতের উদ্দশ্যে নির্বাসিত কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সান্নিধ্য পান ১৯৫৫ সালে। সেখান থেকেই গেরিলা যুদ্ধের মহানায়ক। যার নামের পিছনে এক অদৃশ্য শক্তির চলমান।
এক কাধে রাইফেল আরেক কাধে বিপ্লব আর্দশের ঝোলা নিয়ে ছুটা এর্নেস্টানার নাম। জাহানারা ইমামের “৭১ দিনগুলি” বইতে মুক্তিগেরিলা যোদ্বাদের জীবন গল্পের কথা আছে। আলম, বদি, স্বপন, কাজী, চুল্লু,ও রুমি ভাইয়েরা কোন আর্দশের জোড়ে মৃত্যকে বারবার উপেক্ষা করছে। পাকবাহিনীর হাজারটা বন্দুকের সামনে গেরিলা আর্দশ প্রমান করেছেন হাজার বার। যা ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে।
চে গেরিলাদের শৃঙ্খলা গড়ে তোলার ব্যাপারে নির্ভর করেছিলেন নৈতিকচেতনার উপর আর প্ররণার দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরতেন নিজেকে। আর্দশের কাছে মাথা পেতে দেওয়াই তো ব্যক্তি সাহসের পরিচয়। চে গুয়েভার শুধু একটি নাম না, একটি জীবন্ত আর্দশ সংগ্রামের পরিচয়।