ঠাকুরগাঁওয়ে সোনার খোঁজে সারারাত মাটি খুঁড়ছে একটি এলাকার হাজার হাজার মানুষ। একটি ইট ভাটার মাটির স্তুপে কেউ পাচ্ছে সোনা আবার কেউ সোনা পাওয়ার আশা নিয়ে রাতভর বিভিন্ন জায়গায় মাটির স্তুপে খুঁড়ে চলছেন। তবে সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ওই ভাটা ও তার আশপাশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার অবস্থিত আরবিবি ইট ভাটা। মাস দেড়েক আগে হঠাৎ সেখান থেকে গুঞ্জন ওঠে মাটি থেকে স্বর্ণ পাওয়ার। তখন থেকেই পাহাড়ের মতো স্তুপ করা ভাটার মাটি খুঁড়ে স্বর্ণ খোঁজার চেষ্টা করছিলেন স্থানীয়রা। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় গত বেশ কয়েক দিন ধরে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার থেকে আগত হাজারো মানুষ দিন ও রাত ভর স্বর্ণের খোঁজে মাটি খুঁড়ে সন্ধীহান। এদিকে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ওই ভাটায় ও তার আশপাশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন প্রশাসন।
এক সময় কথিত ছিল জ্বীনের সোনার হাড়ি পেয়ে ভাগ্য পরিবর্তন। লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে মাটি খুঁড়ে চলেছেন হাজারো মানুষ। গতকাল শনিবার দিনে ও রাতে এমনি দৃশ্য দেখা
আরবিবি ইট ভাটায় গিয়ে দেখাযায় বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ কেউ কোদাল, কেউ বাসিলা, কেউ খুন্তি নিয়ে এসেছেন স্বর্ণের খোঁজে। শিশু মহিলা থেকে শুরু করে কিশোর, বয়োজ্যেষ্ঠরা সহ দলে দলে স্বর্ণ পাওয়ার আশায় খুঁড়ে চলেছেন মাটি। পাহাড় সম আরবিবি ইট ভাটায় মাটির স্তূপগুলো রাতে স্বর্ণের মতোই জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল। রাতের অন্ধকারে মানুষের হাতে থাকা টর্চ লাইট ও মোবাইলফোনের আলোতে ইটভাটার মাটির স্তূপ স্বর্ণালী রূপ ধারণ করে। দূর থেকে যে কেউ দেখলেই গভীর অন্ধকারে টর্চের আলোয় আলোকিত স্বর্ণালী এক পাহাড়ের দৃশ্য দেখে চমকে উঠবে। মনে হবে বাংলাদেশের উত্তরের এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে অলৌকিকভাবে কোনো সোনার পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে।
হাজারো মানুষের বিশ্বাস আর আস্থা যেন কাতিহারের ইট ভাটার মাটির স্তূপ। কেউ ভাগ্য বদলের আশায় আবার কেউ শখের বসে গভীর রাতে খুঁড়ে চলছেন মাটি।
স্থানীয়রা মনেকরছেন, রাজা টংকনাথের বাড়ির বিলুপ্ত এক মন্দিরের পাশ থেকে ইট তৈরীর জন্য মাটি গুলো নিয়ে আসা হয়েছে এই ভাটায়। তখনকার জমিদার ও ধনিদের অনেক স্বর্ণলংকার ছিল। তারা মন্দিরে সোনারুপা দিতো। মন্দিরটি ধ্বংসের ফলে সেগুলো হয়তো সেখানকার আশপাশের মাটিতে চাপা পরে। আর সেই মাটির সাথে এসব উঠে আসে এখানে।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে চলছে মাটি স্বর্ণের খোঁজে খনন প্রতিযোগিতা। স্থানীয়রা সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকেও ছোটখাটো যানবাহন নিয়ে স্বর্ণের সন্ধানে ভাগ্য বদলের জন্য ছুটে এসেছেন নানান পেশার মানুষ।
এমনি স্বর্ণের সন্ধানে মাটি খুড়তে আশা সালাম বলন, মাটি খুঁড়ে বেশ কিছুদিন থেকেই অনেকে সোনা পাচ্ছেন। এমন কথা শুনে আমি ও আমার এলাকার অনেকে এসেছি এখানে। ভাগ্য বদলের আশায় দিনের পর দিন ও ঘন্টার পর ঘন্টা মাটি খুঁড়েই চলেছি। কিন্তু সোনা পাচ্ছিনা।
মাটি খুড়ার দৃশ্য দেখতে আশা বাপ্পি বলন, আমরা মিডিয়া ও ফেসবুকে দেখে পরিবারের বউ বাচ্চা নিয়ে ছুটে এসেছি এসব দৃশ্য দেখতে। এটি গুজব হলে বা সোনা পাওয়া না গেলে এখানে এতো মানুষ কেন আসবে ও দিনের পর দিন কেন মাটি খনন করবে। নিশ্চই এখানে সোনা পাওয়া যাচ্ছে। গভীর রাতে হাতে কোদাল, বাসিলা, খুন্তি, সাবাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে ঘেমে যাওয়ায় অনেকের শরীরের ক্লান্তির ছাপ কিন্তু তার পরেও স্বর্ণ খোঁজার চেষ্টার যেন কোন কমতি নেই তাদের।
ভাটার পাশের বাসিন্দা রফিক জানান, ইতিমধ্যে এখানে মাটি খুঁড়ে স্বর্ণলংকার পেয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে পাঁচ শতাদিক মানুষ। অনেকেই সোনা পেয়েছেন তবে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারেন এই ভয়ে মুখ খুলছেন না। অনেকে আবার মাসদেড়েক ধরে রাত ভর মাটি খুঁড়েও পাননি সোনা। কিন্তু তারা অন্যকে ভরি ভরি স্বর্ণলংকার পেতে দেখেছেন। তারা বলছেন, যারা সোনা পেয়েছেন তারা আবার অনেকে এলাকা ছেড়ে দূরে চলে গেছে।
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রকিবুল হাসান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ওই ইট ভাটায় ও তার আশপাশ এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে ১০ টায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
হিমেল/ আল / দীপ্ত সংবাদ