স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। দেশের অনেক পৌরসভা বিলুপ্তি এবং সরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ করতে পারে এই সংস্কার কমিশন।
কমিশন ৪৯ হাজার মানুষের মতামত নিয়ে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করছে। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
পৌরসভা বিলুপ্তির সুপারিশ
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই আর্থিকভাবে টিকে থাকার সক্ষমতা হারিয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, একশোরও বেশি পৌরসভা তাদের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা দিতে ব্যর্থ। আর্থিক সংকটে পড়া এসব পৌরসভা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান জানান, ‘অনেক পৌরসভা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাদের নিজস্ব আয়ের উৎস নেই বললেই চলে, ফলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানের ওপর নির্ভরশীল।‘
এই সমস্যা সমাধানে কমিশন আর্থিকভাবে অচল পৌরসভাগুলো বিলুপ্ত করার পরিকল্পনা করছে। তবে বিলুপ্তির পর এসব এলাকাকে ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশও থাকবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অকার্যকর পৌরসভাগুলো বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাচাই–বাছাই করে। এখন নির্বাচিত পরিষদ নেই, তাই এই সময়ে সংস্কার করা সহজ হবে।‘
নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের সুপারিশ
বর্তমানে মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। কমিশন এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় ওয়ার্ড ভিত্তিক নির্বাচিত কাউন্সিলর বা মেম্বাররা তাদের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানান, ‘এই পদ্ধতিতে একক ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন কমবে এবং স্থানীয় সরকারের সদস্যদের মধ্যে দায়বদ্ধতা বাড়বে।‘
কমিশন একই সঙ্গে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের আইন বাতিল করারও সুপারিশ করেছে।
একই দিনে স্থানীয় নির্বাচন
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো কার্যকর করতে কমিশন একই দিনে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং জেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব হলেও তা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে।
অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে ভোটের সহিংসতা বেশি হওয়ায় একই দিনে এতগুলো নির্বাচন পরিচালনা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে।‘
সরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ
বর্তমান আইনে সরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তবে কমিশন এই বিধান শিথিল করার সুপারিশ করেছে। তাদের মতে, এতে শিক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তিদের স্থানীয় সরকারের নেতৃত্বে আসার সুযোগ বাড়বে।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে স্থানীয় সরকারের মান উন্নত হবে এবং সেবার মান বাড়বে।‘
কমিশনের সুপারিশে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে–
সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সীমিত করা।
সংরক্ষিত নারী সদস্যদের ক্ষমতা বাড়ানো।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধান বাতিল।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আরো কার্যকর ও গণতান্ত্রিক ধারা শক্তিশালী হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা