শেরপুরের একমাত্র স্থলবন্দর ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও এলাকা। এই বন্দরটিকে ঘিরে রয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্ম সংস্থান। রয়েছে শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকটি সংগঠনর।
এরমধ্যে নাকাগাঁও লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নে নির্বাচন আসন্ন। বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পোষ্টার ব্যানার, মতবিনিময়ের মাধ্যমে চলছে প্রার্থীদের ব্যাপক কর্ম ব্যাস্থতা। আর প্রার্থীদের বক্তব্যে বেরিয়ে আসছে দুর্নীতির চিত্র।
জানা গেছে, বেগম মতিয়া চৌধুরির প্রচেষ্টায় ১৯৯৭ সাল থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসার দুয়ার খুলে এই বন্দরের মাধ্যমে। আমদানী শুরু হয় কয়লা ও পাথর। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জমা হতে থাকে সরকারী কোষাগারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এলাকার সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষের। হাজার হাজার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে রোজগার করে এই বন্দর থেকে। গড়ে ওঠে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠিত হয় হয় নাকুগাঁও লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনের সদস্য হয় আট শতাধিক শ্রমিক। এরমধ্যে আছে ৬৪ জন শ্রমিক সর্দার। সদস্যভুক্ত শ্রমিকরা নিয়মিত চাঁদা দেয় এই সংগঠনে। গঠিত হয় একটি কার্যকরী পরিষদ। প্রতি তিন বছর পর পর ১২ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। একই পদে একাধিক প্রার্থী থাকলে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এই শ্রমিক সংগঠনের নির্বাচন।
২০২০ সালে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এই সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ মাসেই নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। যা সাধারণ সভার মাধ্যমে কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে।
সময় সন্নিকটে, তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রার্থীরা। পোষ্টার ব্যানারে শোভা পাচ্ছে নাকুগাঁও স্থল বন্দর এলাকাসহ আশপাশের বাজার, রাস্তার মোড়ে ও বিভিন্ন দোকানপাটে। নির্বাচনী আলোচনার ঝর বইছে বন্দর এলাকায়। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে একাধিক প্রার্থী নেমেছেন মাঠে। নির্বাচনী প্রাচারণার নিজস্ব অফিস খুলে সেবা দিচ্ছেন ভোটারদের। চলছে শোডাউন ও ভোটারদের সাথে মতবিনিময়। ভোটারদের মন জয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীর বক্তব্য ও কথায় বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল।
কয়লা পাথর আমদানীকারক রফিকুল ইসলাম কালাকুমা মোড়ে নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় বক্তব্যে বলেন–নাকুগাঁও লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়ন–৪৫৪৬ শ্রমিকদের সংগঠন হলেও কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন আমদানী–রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের অনেক মালিকেরা। তারা এই সংগঠনের অর্ন্তভুক্ত হয়ে শ্রমিকের কার্ড নিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে ভোগ করছেন শ্রমিকের সুবিধা। এতে নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত শ্রমিকেরা। এই সংগঠনের নেতৃত্বে এসে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন অনেকেই। আগে তাদের কিছুই ছিল না। এখন তারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
নাকুগাঁও লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নে আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী প্রত্যাশী মো.রমজান আলী বলেন, সংগঠনের বর্তমান কমিটি শ্রমিকদের মজুরি থেকে গাড়ী লোড বাবাদ প্রতি সেপ্টিতে তিন টাকা নিচ্ছেন। ৫০ পয়সা চাঁদা আলাদাভাবে আদায় করে নিচ্ছেন সংগঠনের অফিস ঘর নির্মাণ বাবদ। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় হলেও শ্রমিকরা পেয়েছে শুধু একটি দুতলা অফিস ভবন। অর্থনৈতিক দুর্নীতি হয়েছে এখানে ব্যাপকভাবে। দুর্নীতির হাত থেকে শ্রমিকদের মুক্তির জন্য তিনি আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হচ্ছেন। শ্রমিকদের অনুরোধে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন বলে জানান।
লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলম ও সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া জানান, কমিটির নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করেছে। আলোচনার মাধ্যমে লোড আনলোড শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করেছেন। পাথরের লোড সেপ্টি প্রতি তিন টাকা আদায়ের মধ্যে এক টাকা পায় শ্রমিকরা। বাকী ৫০ পয়সা নেওযা হয় সংগঠনের ঘর বাবদ। এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা পায় কমিটি। তবে খরচ হয় পাথর লোডের পেলুডার(যান্ত্রিক মেশিন) বাবদ। এতে ঘর নির্মাণে কমিটির নেতাদের কাছ থেকেও আরো টাকা নেওয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানাসহ সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও তারা উত্তোলিত এসব টাকা থেকে দান করে থাকেন। বিগত দিনে প্রয়াত শ্রমিক নেতাদের স্মরণসভায় বেশ খরচসহ তারা শ্রমিকদের বিপদে–আপদে, অসহায় শ্রমিক সন্তানদের বিয়েতে সহযোগিতা, দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সব সময়।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ