ম্যাচের শুরুতেই যে স্কটল্যান্ডকে চেপে ধরল জার্মানি, শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখল তারা। এর মাঝে পাঁচবার জাল খুঁজে নিয়ে স্বাগতিক দেশ হিসেবে ইউরোয় উড়ন্ত যাত্রা শুরু করল ইউলিয়ান নাগেলসমানের দল।
শুক্রবার রাতে আলিয়ান্স আরেনায় জার্মান কিংবদন্তি বেকেনবাউয়ারকে স্মরণ করে ২০২৪ সালের ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতার পর্দা ওঠে। উদ্বোধনী ম্যাচেই ১০ জনের স্কটল্যান্ডকে ৫–১ গোলের ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছে স্বাগতিকরা।
ম্যাচের দশম মিনিটে ফ্লোরিয়ান ভিয়ার্টসের গোলে খাতা খোলার পর ১৯তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আরেক জার্মান তরুণ জামাল মুসিয়ালা। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে কাই হাভেয়ার্টসের পেনাল্টি থেকে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে বিরতিতে যায় জার্মানি। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা নিকোলাস ফুলক্রুগের পর শেষ সময়ে এমরে চানের গোলের মাধ্যমে ম্যাচের সমাপ্তি টানে স্বাগতিকরা।
অনদিকে, শুরু থেকেই দুর্বল রক্ষণের কারণে ভুগতে থাকা স্কটল্যান্ডের কাঁধের ওপর একের পর এক গোলের বোঝা বাড়তে থাকে। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে ডি–বক্সের মধ্যে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে বাজেভাবে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন রায়ান পর্টিয়াস। দ্বিতীয়ার্ধে একজন কম নিয়ে জার্মানির মুহুর্মুহু আক্রমণ সামলালেও আরও দুই গোল হজম করতে হয় স্কটল্যান্ডের। শেষের দিকে আন্টনিও রুডিগারের উপহার দেওয়া গোলটিই ম্যাচে তাদের একমাত্র সান্ত্বনা।
ম্যাচ শুরুর ৫৪ সেকেন্ডেই প্রতিপক্ষের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেন ভিয়ার্টস। মাঝমাঠ থেকে আসা দূরপাল্লার শটটি বুক দিয়ে নামিয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। এরপর শট নিলেও গোলরক্ষকের মাথায় লেগে বলটি বেরিয়ে যায়। তবে রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালে কর্নার থেকে বঞ্চিত হয় জার্মানি।
অভিজ্ঞতায় মোড়া মাঝমাঠে বল দখলের লড়াইয়ে শুরু থেকেই এগিয়ে ছিল জার্মানি। পলে একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করে চলেছিলেন ক্রুস–গুনডোগানরা। অন্যদিকে, প্রথম থেকেই চাপ সামলাতে গিয়ে হকচকিয়ে যায় স্কটল্যান্ডের রক্ষণভাগ। এর শাস্তিও পেয়ে যায় তারা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে।
ম্যাচের দশম মিনিটেই স্বাগতিক সমর্থকদের উল্লাসে মেতে ওঠে আলিয়ান্স আরেনার গ্যালারি। ইয়োশুয়া কিমিখের উড়ন্ত পাসটি বুক দিয়ে নামিয়ে পায়ের প্রথম স্পর্শেই জালে জড়ান ভিয়ার্টস।
গোল পেয়ে আরও ক্ষিপ্র হয়ে ওঠা জার্মানি ফের জালের দেখা পায় ১৯তম মিনিটে। মাঝ মাঠ থেকে গুনডোগানের চুলচেরা পাস ধরে বক্সের বাঁ দিকে এগিয়ে যান কাই হাভেয়ার্টস। সেখান থেকে ব্যাকপাসের মতো দিলে মুহূর্তেই বলটি গন্তব্যে পাঠিয়ে দেন বায়ার্ন মিউনিখের ২১ বছর বয়সী উইঙ্গার জামাল মুসিয়ালা।
এর সাত মিনিট পর আরও একবার বুক কেঁপে ওঠে বহু পথ পাড়ি দিয়ে মিউনিখে আসা স্কটিশ সমর্থকদের। ড্রিবল করে বক্সের মধ্যে ঢোকার সময় ফাউলের শিকার হন মুসিয়ালা। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে বাজিয়ে দেন পেনাল্টির বাঁশি। তবে ভিএরআরের হস্তক্ষেপে তা ডি–বক্সের কয়েক ইঞ্চি বাইরে ফ্রি কিকে পরিণত হয়। হাভেয়ার্টস রক্ষণ দেওয়ালের নিচ দিয়ে বলটি বের করলেও গোলরক্ষককে ফাঁকি দিতে না পারায় সে যাত্রায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে স্কটল্যান্ড।
বাকি সময় জার্মান আক্রমণের ঢেউ সামলাতেই ব্যস্ত থাকা স্কটল্যান্ড আরও বড় ধাক্কা খায় ৪৪তম মিনিটে। ৪২তম মিনিটে গুনডোগানের দারুণ হেড গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিলেও বল বক্সের সামনে থেকে ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন স্কটিশ ডিফেন্ডাররা। ফলে আবার বল পেয়ে শট নিতে গেলে জার্মান অধিনায়ককে বাজেভাবে ফাউল করে বসেন রায়ান পর্টিয়াস। ভিএআর মনিটরে রিভিউ দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি, সঙ্গে লাল কার্ড দেখিয়ে ওয়াটফোর্ডের ডিফেন্ডারকে মাঠছাড়া করেন তিনি। আর সোজাসুজি পেনাল্টি শটে ব্যবধান ৩–০ করেন হাভেয়ার্টস।
তিন গোল ও লাল কার্ডে প্রথমার্ধেই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় স্কটল্যান্ড। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের সুযোগ তৈরি তো দূরের কথা, নিজেদের বাজে রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন বাকিসব খেলোয়াড়রা।
আল / দীপ্ত সংবাদ