সীমান্ত নদী ইছামতির সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের শুইলপুর শ্মশানঘাটের তিন নম্বর পোল্ডারে বেড়িবাঁধে ব্যাপক ধসে গেছে। খবর পেয়ে ৩০ মিটার জিও ব্যাগের রোল দিয়ে ঢেকে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। এছাড়া ফাটল দেখা দেয়া ২৪০ মিটার বেড়িবাঁধ কোদাল দিয়ে কুপিয়ে সমান করে দেয়া হয়েছে।
ফলে ওই এলাকার মানুষজন প্রতি মুহূর্তে নতুন করে ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
শুইলপুর গ্রামের কিনু গাজীর ছেলে দিনমজুর আকবর আলী গাজী জানান, বসন্তপুর খাদ্য গুদাম থেকে শুইলপুর হয়ে খাঞ্জিয়া বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ইছামতী নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা। এ সীমান্তের বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বোলতলা ও মাহমুদপুর। কয়েক বছর আগে থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার পাশে নদীতে সরকারিভাবে বালি কাটতে অনুমতি দেয়ায় বসন্তপুর খাদ্য গুদামের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও খাঞ্জিয়া এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। যার প্রভাবে সীমান্তবর্তী কমপক্ষে ২৫–৩০ জনের কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
অপরদিকে ভারতের পাড়ে চর জেগে ওঠায় বাংলাদেশের মানচিত্র পরিবর্তিত হচ্ছে। ভাঙনের ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুলাই শুক্রবার দুপুরে শুইলপুর শ্মশানঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের ৩০ মিটার জুড়ে নদীতে ধসে যায়। ধসের প্রভাবে ২৪০ মিটার জুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ১২ জুলাই ভোর থেকে টানা বৃষ্টির কারণে এ ধস হয়।
শুইলপুর গ্রামের সিরাজ গাজী ও মোহাম্মদ গাজী অভিযোগ করে বলেন, শ্মশানঘাটের কাছে তাদের চিংড়ি ঘের ও ফসলি জমি রয়েছে। তিন বছর আগে থেকে এখানে ভাঙনের আশঙ্কা করছেন তারা। রাতের জোয়ারের সঙ্গে বৃষ্টি নামলে তাদেরসহ এলাকার অনেকেরই ঘের ও ফসলি খেত ভেসে যাবে। ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে।
বেড়িবাঁধ ধসের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করে তারা বলেন, ওদের গায়ে গণ্ডারের চামড়া। গালি কেন, মারলেও তাদের কিছু যায় আসে না। ভাঙন ও ফাটল দেখা দেয়ার তিনদিন পর ধস কবলিত বেড়িবাঁধ সরকারি জিও বাগের রোল দিয়ে ঢেকে দিয়ে ও ফাটল কবলিত ২৪০ মিটার বেড়িবাঁধ কোদাল দিয়ে কুপিয়ে সমান করে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
ভাড়াসিমলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান নাহিদ জানান, শুইলপুর শ্মশানঘাট এলাকায় ১২ জুলাই ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে এ ধস ও ফাটল দেখা দেয়। ওইদিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ধস নামার বিষয়টি অবহিত করলেও বাঁধ সংস্কারের জন্য বালি, বাঁশ, বল্লম ছাড়াও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে ১৪ জুলাই থেকে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানালেও ১৫ জুলাই তারা কেবলমাত্র জিও ব্যাগের রোল দিয়ে ধস কবলিত ৩০ মিটার এলাকা ঢেকে দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছেন।
এ ছাড়া ফাটল কবলিত ২৪০ মিটার জায়গা কোদাল দিয়ে চেঁচে ছুলে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড–১ এর কালিগঞ্জের তিন নম্বর পোল্ডারের দায়িত্বে থাকা সেকশন অফিসার মাসুদ রানা বলেন, গত বছর থেকে শুইলপুর শ্মশানঘাট এলাকায় ফাটল সম্পর্কে তারা সচেতন ছিলেন। দ্রুত কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ১২ জুলাই ৩০ মিটার লম্বা জায়গা জুড়ে দেড়ফুট করে বেড়িবাঁধে ধস নামায় ও দীর্ঘ এলাকায় ফাটল দেখা দেয়ায় বর্ষা মৌসুমে সংস্কার করার জন্য বালি, বল্লম ও বাঁশসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী যোগাড় করা সম্ভব না হওয়ায় আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে জিও ব্যাগের রোল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। বর্ষা কেটে গেলে পূর্ণাঙ্গভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে। করে রবিবার সকাল থেকে তারা কাজ শুরু করবেন।
রঘুনাথ খাঁ/এজে/দীপ্ত সংবাদ