সজনে পাতা আমাদের দেশে খুবই সহজলভ্য। এর রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণাবলী। প্রাচীনকাল থেকেই সজনে পাতা ভেষজ ও পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চলুন, জেনে নেয়া যাক সজনে পাতার কিছু উল্লেখযোগ্য গুণাবলী ও ব্যবহারবিধি।
পুষ্টিগুণ– সজনে পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান। এতে পাওয়া যায়:
ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ভিটামিন ই: ত্বকের জন্য উপকারী।
ক্যালসিয়াম: হাড়ের গঠনে সাহায্য করে।
পটাশিয়াম: হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
প্রোটিন: শরীরের গঠনে ও ক্ষত মেরামতে সহায়ক।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: সজনে পাতায় থাকা ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত সজনে পাতা খেলে সর্দি, কাশি এবং অন্যান্য সংক্রমণজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: সজনে পাতার রস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. হাড়ের স্বাস্থ্য: এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। বয়স্কদের হাড়ের ভঙ্গুরতা প্রতিরোধে সজনে পাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: সজনে পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত সজনে পাতা সেবনে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে।
৫. ত্বকের যত্ন: সজনে পাতার রস ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। এটি ত্বকের সংক্রমণ কমাতে এবং পিগমেন্টেশন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটির অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৬. হজমশক্তি বৃদ্ধি: সজনে পাতা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমায়। এতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়ক এবং অন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করে।
৭. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ: এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত সজনে পাতা সেবনে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে।
৮. শক্তি বৃদ্ধি:
সজনে পাতা খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দুর্বলতা কমে। এতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের ক্লান্তি দূর করে এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
ব্যবহারবিধি
১. রস: সজনে পাতার রস করে পান করা যেতে পারে।
২. সুপার খাদ্য: সজনে পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৩. ভাজি: সরাসরি ভাজি করে খাওয়া যায়, যা খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।
৪. চা: সজনে পাতা দিয়ে চা বানিয়েও খাওয়া যায়।
সার্বিকভাবে, সজনে পাতা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সজনে পাতা যোগ করলে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমবে। তাই, আমাদের সকলেরই উচিত সজনে পাতাকে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা।
এমবি/এসএ/দীপ্ত সংবাদ