আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ড্রোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা–২০২৫’ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন এই বিধিমালায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা এবং রাজনৈতিক দলের জন্য দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্তসাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির হাতে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ ও ২০০৮ সালের আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করে এবার নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন করা হলো। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ জারির পর ‘আচরণবিধিমালা–২০২৫‘ গেজেট আকারে জারি করেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ।
আচরণবিধিমালা–২০২৫‘ যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো–
কোনো প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণা পরিচালনা করতে পারবে না। তবে এক্ষেত্রে প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট বা দল বা প্রার্থী প্রচার শুরুর আগেই সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই–মেইল আইডিসহ অন্যান্য শনাক্তকরণ তথ্যাদি রিটার্নিং অফিসারের নিকট দাখিল করতে হবে।
প্রচার–প্রচারণাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করা যাবে না। ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ভুল তথ্য, কারও চেহারা বিকৃত করা ও নির্বাচন সংক্রান্ত বানোয়াট তথ্যসহ সব প্রকার ক্ষতিকর কনটেন্ট বানানো ও প্রচার করা যাবে না।
প্রতিপক্ষ, নারী, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনী স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহার করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত সব কনটেন্ট শেয়ার ও প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে হবে।
কোনো দল বা প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশে জনসভা, পথ সভা, সভা–সমাবেশ বা কোনো প্রচারণা করতে পারবে না। ভোটের প্রচারে থাকছে না পোস্টারের ব্যবহার। একজন প্রার্থী তার সংসদীয় আসনে ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবে না; যার দৈর্ঘ্য হবে সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট আর প্রস্থ ৯ ফুট।
নির্বাচনের দিন ও প্রচারের সময় কোনো ধরনের ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো প্রার্থী ও প্রতিষ্ঠান ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবে। তবে ভোটার স্লিপে প্রার্থীর নাম, ছবি, পদের নাম ও প্রতীক উল্লেখ করতে পারবে না।
বিলবোর্ডে শুধু যেগুলো ডিজিটাল বিলবোর্ড, সেগুলোতে আলোর ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুতের ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া আলোকসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেটে পলিথিনের আবরণ নয়, প্লাস্টিক (পিভিসি) ব্যানার ব্যবহার করা যাবে না।
প্রচারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছে– প্রচার সামগ্রীতে পলিথিন, রেকসিনের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে প্রার্থী ও দলের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও দিতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবার। দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
এসএ