ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদের সমস্ত বৈশিষ্ট্য’ দেখিয়েছে এবং বাংলাদেশে রাজনীতিতে তাদের ‘কোনো স্থান নেই’।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব মন্তব্য করেন।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদে হলেও নিশ্চিতভাবেই তাঁর (শেখ হাসিনা) কোনো জায়গা নেই, আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই—বাংলাদেশে। নিজেদের স্বার্থ বাড়িয়ে নিতে তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ (দমনপীড়ন) করেছে, তারা রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে’, ‘একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো ফ্যাসিস্ট দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।’
আওয়ামী লীগ ভেঙে যেতে পারে বলে তাঁর অনুমান উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তবর্তী সরকার তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, কারণ এটি ‘রাজনৈতিক সরকার নয়’। আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে’ নির্ধারিত হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, ‘তাঁর (শেখ হাসিনার) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতের রায়ের পর আমরা ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির ভিত্তিতে তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। আমি মনে করি না যে রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে।’
রাজনীতিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া কিংবা রাজনৈতিক দল গঠন করার তাঁর কোনো ইচ্ছা নেই। তাঁর সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।’
ড. ইউনূস ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ‘কিছু ঘটনা’ ঘটেছে এবং ‘খুব অল্প সংখ্যক’ প্রাণহানি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, তাদেরকে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, (সহিংসতার শিকার) অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। এটাকে ভিন্ন রূপ দেওয়া হচ্ছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ, পানি ও বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। কিন্তু দিল্লির সমর্থনের অভাব তার সরকারকে ‘‘আঘাত’’ করেছে। মোদি যদি বাংলাদেশ সফরে আসতে চান, তাঁকে অবশ্যই স্বাগত জানানো হবে।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যেমনটি দুই প্রতিবেশীর থাকা উচিত।’
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসএ