মাদারীপুরে ‘শিরক ও গুনাহর কাজ’ আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী একটি বটগাছ কাটা হয়েছে।
সদর উপজেলা শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরার কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে গাছ কাটার ভিডিও।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার (৬ মে) ঘটনাস্থল পরির্দশন করে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল সিকদার বলেন, প্রচণ্ড রোদে অনেকে এই গাছের নিচে ছায়ায় বসে থাকতো। তাছাড়া সৌন্দর্যের দিক থেকেও গাছটি অনেকটাই চোখে পড়ার মতো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি শত শত পাখির অভয়ারণ্য এ গাছ। এভাবে গাছটি একেবারে কেটে ফেলা ঠিক না।
স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলেন, গাছটি মানুষের বিভিন্ন উপকারে আসতো। আমরা কৃষি কাজ শেষে এই বটগাছের নিচে বসে জিরাইতাম। নদী পাড় হওয়ার সময় নৌকা আসতে দেরি হলে অনেক মানুষ এই গাছের ছায়ায় দাঁড়াইতো। কিন্তু এখন তো আর সেই জায়গা রইল না।
বটগাছ কাটায় অংশ নেওয়া আব্দুল কুদ্দুস নামে স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, ‘গতকাল আমিও গাছ কাটায় অংশ নিয়েছি। এই গাছকে ঘিরে ‘শিরক’ চলে। গাছের গোড়ায় মোমবাতি, নতুন কাপড়, মিষ্টি দেওয়া হয়, সিরনি দেয়, লাল কাপড় বাঁধে, এটাকে সৃষ্টিকর্তা মনে করে; যা পাপ, ‘শিরক‘, এটা একটা ‘গোনাহের কাজ‘। আল্লাহ এগুলো মেনে নিবেন না। তাই স্থানীয় আলেম ও ভাই–ব্রাদাররা মিলে গাছটি কেটেছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি একটা গাছ প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন দেয়। আমরা সবাইকে আশ্বাস দিচ্ছি এখানে আমরা ৩টি গাছ রোপণ করব। আমরা জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু গাছটির জন্য গোনাহের কাজ হচ্ছে, তাই গাছটি কেটে ফেলেন’।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মাদারীপুর জেলা শাখা সভাপতি মাওলানা হাবিব আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ‘বটগাছের গোড়ায় এমন কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থন করে না। তাই কেটে ফেলা হয়েছে গাছটি।’
স্থানীয় মসজিদ ইমাম মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “কোনোভাবেই ‘শিরক’ করা যাবে না। তবে এটি বন্ধ করতে শতবর্ষী বটগাছ কাটাও ঠিক হয়নি। যারা এসব কাজ করছেন তাদের বোঝানো যেতো। গাছটি বেঁচে থাকলে মানুষসহ বিভিন্ন পাখিদেরও অনেক উপকারে আসতো।”
মাদারীপুর সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আদিল হোসেন জানান, আমি সকালেই আলম মীরের কান্দি গিয়ে বট গাছটিকে দেখে এসেছি। গাছটির ৯০ শতাংশই কেটে ফেলা হয়েছে। মাটির সঙ্গে ১০ ফুট উচ্চতার দুটো মূলকাণ্ড ডালাপালাবিহীন দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সকল মূলকাণ্ড ও ডালাপাল কেটে ফেলা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, ‘আমি গাছটির মালিক হান্নান হাওলাদারের সাথে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন মাত্র ১৫০০ টাকায় গাছটি বিক্রি করেছেন। অথচ গাছটির আর্থিক মূল্য এর চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কথা। আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করব। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।‘
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব জানান, শিরখাড়ায় যে বটগাছটি কেটে ফেলা হয়েছে আমরা সেখানে প্রশাসনের লোক পাঠিয়েছি। যারা অভিযুক্ত তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে. মাদারীপুর বন বিভাগের জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জানি। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেন, সেভাবে পরবর্তী কাজ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, ‘শিরক‘ হচ্ছে আল্লাহর এমন কোনো সমকক্ষ স্থির করা, যাকে আল্লাহর মতোই ডাকা হয়, ভয় করা হয় ও ভালোবাসা নিবেদন করা হয়, তার কাছে আশা করা হয়।
এসএ