রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ২টার কিছু পর থেকে সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
এ সময় আন্দোলনকারীরা শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরারের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—
১. নিহতদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশ।
২. আহতদের নির্ভুল তালিকা প্রকাশ।
৩. নিহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান।
৪. আহতদের চিকিৎসা ব্যয় সরকারিভাবে বহন।
৫. শিক্ষকদের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অসদাচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা।
৬. দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তপূর্বক দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
এদিকে, নিরাপত্তার স্বার্থে মূল গেট বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। বিক্ষোভের কারণে সচিবালয় সংলগ্ন গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে সচিবালয়মুখী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়, তৈরি হয় যানজট।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে এফ–৭ বিজি মডেলের একটি ফাইটার জেট বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক, যাদের মধ্যে প্রায় ৭০ জন এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পরও মঙ্গলবার এইচএসসি ও সমমানের কিছু বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে গভীর রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, “রাতে যখন আমরা শোকগ্রস্ত, তখনও সরকার ভাবেনি পরদিন পরীক্ষা হবে কিনা। অনেক শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত জানার আগেই সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে যায়। এটা চরম অবহেলা।”
তারা শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরারের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, “এই দায়িত্বহীনতার দায় তার ঘাড়েই বর্তায়। শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এমন সিদ্ধান্তহীনতা মেনে নেয়া যায় না।”
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গোলচত্বরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। স্লোগান, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরার ও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ঘটনাস্থলে গেলে শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েন তারা। “বিচার চাই না, সন্তানের লাশ চাই”, “সঠিক লাশের হিসাব চাই”—এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ।
শিক্ষার্থীরা রাজপথে অবস্থান নেয়ার ফলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসন দাবি করেছে, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত খুব শিগগির জানানো হবে।