জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, শিক্ষার মান বাড়াতে গবেষণা বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন ভাতা যেমন নিশ্চিত করা প্রয়োজন তেমনি খাতা দেখার সম্মানিও বাড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সরকারি সহায়তা বাড়ানো খুবই প্রয়োজন। না হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় টাকা পাবে কোথায়?
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ইকোনমিক রিফরম সামিট ২০২৫’ এর ‘ট্যাকলিং ইয়ুথ আনইমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কিল্ড মাইগ্রেশন’ সেশনে প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ এসব কথা বলেন।
ভিসি আমানুল্লাহ বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। সারাদেশের প্রায় আড়াই হাজার কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছেন তারা। এদের শিক্ষাদানে জড়িত আছেন লক্ষাধিক শিক্ষক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত আড়াই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই তৃতীয়াংশই বেসরকারি। এরা সরকার থেকে শুধু এমপিওর টাকা পায়। যা এক বছরে শিক্ষার্থী প্রতি দাঁড়ায় মাত্র ৭৬৫ টাকা। এর বাইরে সরকার থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি কোন অর্থ সহায়তা পায় না।
শিক্ষার্থী প্রতি সরকারের ব্যয় বৈষম্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে সরকারের ব্যয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের ব্যয় বছরে মাত্র ৭৬৫ টাকা। তাও সেই টাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি পায় না।
প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পরীক্ষার খাতা দেখতে একজন শিক্ষক পান ১৬০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হয় মাত্র ৪৫ টাকা। নিজস্ব খরচে বিশাল আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ফি বাড়ালেও সমালোচনায় পড়তে হয়। বর্তমানে কিছু ফি বাড়ানো হয়েছে এবং এর বড় অংশই যাবে কলেজগুলোতে ইনকোর্স এবং শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রে গুণগত মান বাড়াতে। বেসরকারি কলেজের জন্যে সরকারের কোন বাজেট নাই। তারা টাকা পাবে কোথায়? সামান্য ফি বৃদ্ধি করলেই কলেজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ফি বৃদ্ধি করা হয় নাই। তখন এক রীম কাগজ কিনতে যা টাকা লাগত এখন তার দাম তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু এদের বেশিরভাগই বেকার থাকেন দক্ষতার অভাবে। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের কর্মমূখী শিক্ষা নিশ্চিতে সিলেবাস সংস্কার করা হচ্ছে। এরইমধ্যে স্নাতক সম্মানে আইসিটি ও ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া দেশ–বিদেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন অর্থ। যা সরকার থেকে আসা প্রয়োজন। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া গুণগত মান উন্নয়ন যেমন সম্ভব নয় তেমনি জাতির সার্বিক উন্নতি করা সম্ভব হবে না।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডিজবস ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাসরুর। এতে অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার জিয়া হাসান, ব্রেইন এর নির্বাহী পরিচালক ড. শফিকুর রহমান, বিল্ডনেশন এর প্রতিষ্ঠাতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এবং বিএনপি মিডিয়া সেলের মাহমুদা হাবিবা।