পবিত্র শবে বরাতের জন্য বিশেষ কিছু মুখরোচক মিষ্টান্ন তৈরি করতে চান? হালুয়া একটি সুস্বাদু ও ভিন্নধর্মী মিষ্টান্ন, যা বাসায় সহজেই তৈরি করা যায়। এটি খেতে নরম, মুচমুচে ও সুগন্ধযুক্ত হয়। নিচে ৫টি সুস্বাদু হালুয়ার রেসিপি দেওয়া হলো, যা এই পবিত্র রাতে মিষ্টিমুখ করার জন্য অতুলনীয়!
১. ডিম হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
ডিম – ৪টি
চিনি – ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম–বেশি করা যাবে)
দুধ – ১/২ কাপ
ঘি – ২ টেবিল চামচ
গুঁড়া দুধ – ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
কিশমিশ – ২ টেবিল চামচ
কাজু বাদাম – ২ টেবিল চামচ (কুঁচি করা)
পেস্তা বাদাম – ১ টেবিল চামচ (সাজানোর জন্য)
প্রস্তুত প্রণালী:
একটি পাত্রে ডিমগুলো ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। এর মধ্যে চিনি, দুধ ও গুঁড়া দুধ দিয়ে আবার ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এখন একটি প্যানে ঘি গরম করে দিন। এতে ফেটানো ডিমের মিশ্রণ ঢেলে দিন এবং হালকা আঁচে রান্না করুন। কিছুক্ষণ পর ডিম শক্ত হয়ে গেলে কাঠের চামচ দিয়ে ভেঙে নেড়ে নিন, যাতে ছোট ছোট দানা তৈরি হয়।
মিশ্রণটি যখন শুকিয়ে আসবে, তখন এতে এলাচ গুঁড়া, কিশমিশ, কাজু বাদাম দিন। ভালোভাবে নেড়ে আরও ৫ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না হালুয়া মসৃণ ও মাখনের মতো হয়ে আসে।
চাইলে এক চিমটি জাফরান বা কেওড়া জল যোগ করলে সুন্দর সুগন্ধ আসবে। মিষ্টি বেশি পছন্দ হলে চিনি পরিমাণমতো বাড়িয়ে নিতে পারেন। এটি গরম বা ঠান্ডা, দুইভাবেই দারুণ লাগে!
অতঃপর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন অথবা ঠান্ডা করে পেস্তা বাদাম ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
২. গাজর হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
গাজর (কুঁচি করা) – ১ কেজি
তরল দুধ – ১ লিটার
চিনি – ১ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম–বেশি করা যাবে)
ঘি – ৪ টেবিল চামচ
কনডেন্সড মিল্ক – ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক, স্বাদ বাড়ানোর জন্য)
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
কিশমিশ – ২ টেবিল চামচ
কাঠবাদাম ও কাজু – ২ টেবিল চামচ (কুঁচি করা)
তৈরি করার পদ্ধতি:
গাজর ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে কুচি করে নিন।
এখন একটি ভারী তলার প্যানে দুধ দিয়ে গাজর সিদ্ধ করুন। চুলার আঁচ মাঝারি রাখুন এবং মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন, যাতে নিচে লেগে না যায়।
গাজর যখন নরম হয়ে যাবে এবং দুধ প্রায় শুকিয়ে আসবে, তখন চিনি ও কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দিন। এই পর্যায়ে হালুয়ার রঙ গাঢ় লালচে হয়ে আসবে।
এবার ঘি ঢেলে দিন এবং ভালো করে নাড়তে থাকুন। এলাচ গুঁড়া, কিশমিশ, কাঠবাদাম ও কাজু মিশিয়ে দিন। ৫–৭ মিনিট ভালোভাবে নাড়ুন, যতক্ষণ না হালুয়া ঘন হয়ে আসে এবং ঘি ছাড়তে শুরু করে।
যদি বেশি ক্রিমি স্বাদ চান, তাহলে কনডেন্সড মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে একটু জাফরান বা কেওড়া জল দিতে পারেন, এতে সুগন্ধ আরও বাড়বে। নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন, অথবা ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে পরে উপভোগ করুন!
৩. বুট হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
বুটের ডাল – ১ কাপ (৩–৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে নেওয়া)
চিনি – ১ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম–বেশি করা যাবে)
ঘি – ১/২ কাপ
দুধ – ১/২ কাপ
কনডেন্সড মিল্ক – ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
কিসমিস – ২ টেবিল চামচ
কাজু ও কাঠবাদাম – ২ টেবিল চামচ (কুঁচি করা)
প্রস্তুত প্রণালী:
৩–৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা বুটের ডাল ভালো করে ধুয়ে নরম করে সেদ্ধ করুন। পানি ঝরিয়ে সেদ্ধ ডাল ব্লেন্ড করে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।
অতঃপর কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে বুটের ডালের পেস্ট ঢেলে দিন। মাঝারি আঁচে ক্রমাগত নেড়ে নেড়ে ডাল ভালোভাবে ভাজতে থাকুন। ডালের রঙ হালকা সোনালি হয়ে আসলে এতে দুধ ও চিনি দিন এবং ভালোভাবে মিশিয়ে নেড়েচেড়ে দিন।
মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসলে কনডেন্সড মিল্ক ও এলাচ গুঁড়া দিন। তারপর বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে ভালোভাবে নাড়িয়ে আরও ৫–৭ মিনিট রান্না করুন। যখন ঘি ছাড়তে শুরু করবে এবং হালুয়া নরম ও মসৃণ হবে, তখন নামিয়ে নিন।
হালুয়ার স্বাদ বাড়াতে চাইলে ১ টেবিল চামচ কেওড়া জল যোগ করতে পারেন। বাদাম ও কিশমিশ ছাড়াও পেস্তা বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা যায়। মিষ্টি বেশি বা কম করতে চাইলে চিনি স্বাদ অনুযায়ী বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিন।
এখন গরম গরম অথবা ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন সুস্বাদু বুটের হালুয়া!
৪. পেঁপে হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
কাঁচা পেঁপে – ১টি (মাঝারি সাইজের, খোসা ছাড়িয়ে কুঁচি করা)
চিনি – ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম–বেশি করা যাবে)
দুধ – ১/২ কাপ
ঘি – ৪ টেবিল চামচ
গুঁড়া দুধ – ২ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক)
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
কিশমিশ – ২ টেবিল চামচ
কাজু ও বাদাম কুচি – ২ টেবিল চামচ
কেওড়া জল – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
হালুয়া প্রস্তুত প্রণালী:
কাঁচা পেঁপে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট কুচি করুন। কড়াইতে পানি দিয়ে ১০–১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন, যাতে পেঁপে নরম হয়ে যায়। পানি ঝরিয়ে সেদ্ধ পেঁপে ভালোভাবে চটকে নিন।
অতঃপর কড়াইতে ঘি গরম করে এতে চটকে রাখা পেঁপে ঢেলে দিন। মাঝারি আঁচে ক্রমাগত নেড়ে নেড়ে ভাজতে থাকুন। ৮–১০ মিনিট পর দুধ ও গুঁড়া দুধ দিন এবং ভালোভাবে মেশান।
যখন পেঁপে ভালোভাবে মিশে যাবে, তখন চিনি ও এলাচ গুঁড়া যোগ করুন। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে কিশমিশ ও বাদাম দিন। চাইলে এই সময় ১ চা চামচ কেওড়া জল যোগ করতে পারেন সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য।
মিষ্টি বেশি চাইলে চিনি পরিমাণমতো বাড়িয়ে নিন। ঘন ও মজাদার স্বাদের জন্য কনডেন্সড মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে শুকনো নারকেল কুচি দিয়েও সুগন্ধ ও স্বাদ বাড়ানো যায়।
যখন হালুয়া ঘন হয়ে ঘি ছাড়তে শুরু করবে, তখন নামিয়ে পরিবেশন করুন। চাইলে ওপর থেকে কিছু বাদাম কুচি ও কিশমিশ ছড়িয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
৫. সুজি হালুয়া রেসিপি
উপকরণ:
সুজি – ১ কাপ
চিনি – ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী কম–বেশি করা যাবে)
পানি – ২ কাপ (দুধ ব্যবহার করলে স্বাদ আরও ভালো হবে)
ঘি – ৪ টেবিল চামচ
কিশমিশ – ২ টেবিল চামচ
কাজু ও বাদাম কুচি – ২ টেবিল চামচ
এলাচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
একটি প্যানে ২ টেবিল চামচ ঘি গরম করুন। এতে সুজি দিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন, যতক্ষণ না এটি হালকা বাদামি হয়ে যায় এবং সুন্দর ঘ্রাণ আসে।
এখন অন্য একটি পাত্রে পানি ও চিনি একসঙ্গে গরম করে নিন। চাইলে এতে ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়া দিয়ে সুগন্ধ বাড়াতে পারেন। সিরা ফুটে উঠলে নামিয়ে রাখুন।
অতঃপর ভাজা সুজির মধ্যে ধীরে ধীরে গরম সিরা ঢেলে নেড়ে দিন। অল্প আঁচে রান্না করুন এবং ক্রমাগত নেড়ে দিন, যাতে কোনো দানা না থাকে। যখন হালুয়া ঘন হয়ে আসবে, তখন এতে বাদাম, কিসমিস ও বাকি ঘি দিয়ে দিন। আরও কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন যতক্ষণ না হালুয়া মসৃণ ও মাখনের মতো হয়ে আসে।
দুধ দিয়ে বানালে হালুয়ার স্বাদ আরও মজাদার হবে। বেশি ঘন ও মজাদার স্বাদের জন্য এক চা চামচ কেওড়া জল যোগ করা যায়। চিনি কম বা বেশি করতে পারেন স্বাদ অনুযায়ী।
গরম গরম সুজির হালুয়া পরিবেশন করুন, অথবা ঠান্ডা করে খেতে পারেন! চাইলে ওপর থেকে কিছু বাদাম ও কিসমিস ছড়িয়ে দিতে পারেন।
পবিত্র শবেবরাতে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি মুখরোচক এই পাঁচটি হালুয়া আপনার ও পরিবারের সদস্যদের দিতে পারে প্রশান্ত।
সূএ: ইউএনবি