বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪

রাসেলস ভাইপারের নাম এলো যেভাবে

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

দেশের বেশ কিছু জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাসেলস ভাইপার সাপ মেরে ফেলার প্রচারণাও চালানো হচ্ছে ফেসবুকে।

কিন্তু যে সাপ নিয়ে এত উদ্বেগউৎকণ্ঠা সেই সাপটির নামের আগে রাসেলস এলো কীভাবে। কেন এই সাপের নাম রাসেলস ভাইপার হলো?

জানা যায়, স্কটিশ সার্জন এবং প্রকৃতিবিদ প্যাট্রিক রাসেলের নাম থেকেই এসেছে রাসেলস ভাইপার সাপের নাম। প্যাট্রিক রাসেল ১৭২৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন। প্যাট্রিক এডিনবার্গ হাইস্কুলে রোমান এবং গ্রিক ক্লাসিকে পড়াশুনা শেষে আলেকজান্ডার মনরোর অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিনে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৭৫০ সালে একজন ডাক্তার অফ মেডিসিন হিসাবে স্নাতক হন।

১৭৮১ সালের পর প্যাট্রিক রাসেল ভারতে এসে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ইতিহাস অধ্যয়ন শুরু করেন। সে সময় কর্নাটক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তারা সাপের কামড়ের সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং মানুষের জন্য বিষধর সাপ শনাক্ত করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য প্যাট্রিক রাসেলকে নিয়োজিত করেন। তিনি যে সাপগুলোকে শনাক্ত করেছিলেন তার মধ্যে একটি হলো কাতুকা রেকুলা পোদা (Katuka Rekula Poda), যা প্রাণঘাতী হওয়ার ক্ষেত্রে কোবরার পরের অবস্থানেই ছিল। এটিই বর্তমান সময়ের রাসেলস ভাইপার।

রাসেল গাছের আঁশ ব্যবহার করে বিভিন্ন সাপগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তার অনুসন্ধান ছিল অবিষাক্ত থেকে বিষাক্ত সাপগুলোকে আলাদা করার একটি সহজ উপায় খুঁজে বের করা। আর এ কারণে তিনি কুকুর এবং মুরগির ওপর সাপের বিষের শক্তির পরীক্ষা চালিয়েছিলেন এবং বিষের প্রখরতা বর্ণনা করেছিলেন।

এরপর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে সাপের ওপর একটি বই লিখেছিলেন যা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রকাশ করেছিল। তার অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ ইন্ডিয়ান সার্পেন্টস কালেক্টেড অন দ্য কোস্ট অব কোরোমন্ডেলের‘ (An Account of Indian Serpents Collected on the Coast of Coromandel) প্রথম খণ্ড ১৭৯৬ সালে ৪৪টি প্লেটে প্রকাশিত হয়েছিল। দ্বিতীয় খণ্ডটি চারটি অংশে প্রকাশিত হয়েছিল, যার মধ্যে প্রথম দুটি ১৮০১ এবং ১৮০২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।

প্যাট্রিক রাসেল অসুস্থতার তিন দিন পর অবিবাহিত অবস্থায় ১৮০৫ সালের ২ জুলাই মারা যান। তার বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের তৃতীয় এবং চতুর্থ অংশ ১৮০৭ এবং ১৮০৯ সালে তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়েছিল। পিট ভাইপার ট্রাইমেরেসুরাসের (Trimeresurus) গর্তের ওপর দুটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এছাড়া কীভাবে সাপ তার ফণা ছড়িয়ে দেয় তার ওপর আরেকটি গবেষণাপত্র তৈরি করেছিলেন তিনি। বিষধর এই সাপের ওপর তার গবেষণার জন্যই এই প্রজাতির সাপের নাম রাসেলস ভাইপার হয়। রাসেলস ভাইপারের আরেকটি শ্রেণি রয়েছে যার নাম ডাবোয়া রুসেলি; যা অনেকটাই রাসেলস ভাইপারের মতো দেখতে।

রাসেলস ভাইপার সাধারণত ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল এবং পাকিস্তানে পাওয়া যায়। তবে রাসেলস ভাইপার কোনো নির্দিষ্ট আবাসস্থলে সীমাবদ্ধ থাকে না, এরা ঘন ঘন এলাকা পরিবর্তন করতে থাকে। এই সাপ বেশিরভাগই খোলা ঘাসযুক্ত বা ঝোপঝাড় এলাকা ও কৃষি জমিতে পাওয়া যায়।

রাসেলস ভাইপার একটি নিশাচর প্রাণী। তবে শীতল আবহাওয়ায় এটি দিনের বেলা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে এরা সাধারণত ধীরগতির এবং অলস হয়ে পড়ে এবং কেউ বিরক্ত না করলে আক্রমণ করে না। তবে এদের বিরক্ত করলে এরা বিদ্যুৎ গতিতে আঘাত করতে পারে।

রাসেলস ভাইপারের গর্ভাবস্থার সময়কাল ছয় মাসের বেশি। এরা মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে; তবে বেশিরভাগই হয় জুন এবং জুলাই মাসে। রাসেলস ভাইপার ইঁদুর, ছোট সরীসৃপ, কাঁকড়া, বিচ্ছু, টিকটিকি খায়। যখন তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তারা ইঁদুরের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে, ইঁদুর এবং টিকটিকির উপস্থিতি তাদের মানুষের বাসস্থানের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ।

 

সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More