শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

রাসেলস ভাইপারের আতঙ্কে চরাঞ্চলের মানুষ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

আমরা চরাঞ্চলের মানুষ। আমাদের এখানকার মানুষের প্রধান কাজ জমিতে ফসল ফলানো আর গরু ছাগল পালন করা। প্রায় সবাই এই কাজের সাথে জড়িত। শত শত বিঘা জমিতে ভুট্টা, বাদাম, তিল ও ধানের আবাদ হয়ে থাকে।

গত বছর থেকে চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপের উৎপাত বেড়েছে। কয়েকজন মারাও গেছে। বিষাক্ত এই সাপের ভয়ে খেতে ঠিকমত কাজও করতে পারিনা। না করেও উপায় নাই। নাইলেতো জীবনও চলবো না। এই কথাগুলো বলছিলেন হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক শেখ শমসের আলী।

রাসেলস ভাইপার যা বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে পরিচিত। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর, লেছড়াগঞ্জ ও সুতালড়ী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গত তিন মাসে বিষধর এই সাপের কামড়ে মারা গেছেন পাঁচজন। উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে সম্প্রতি এই সাপের উপদ্রব বাড়ায় বিপাকে সেখানকার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

কৃষক শেখ শমসের আলী আরো বলেন, গত সোমবার দুপুরে আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে ধান কাটার সময় একটি সাপ দেখতে পাই। দেখেই দৌড়ে সেখান থেকে চলে এসে চার পাঁচজন মিলে সেই সাপকে মেরে ফেলি। মারার পর জানতে পারি এটা বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপ।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার এক কৃষক খেতে তিল কেটে দুপুরে তা আনতে গেলে তিলের বোঝায় রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পায়। একের পর এক এই সাপের দেখা মেলায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে। যার জন্য খেত থেকে ফসল ও গবাদি পশুর জন্য ঘাস কাটতে যেতে ভয় পাচ্ছেন কৃষকরা।

স্থানীয় আব্দুল বাতেন জানান, কয়েকদিন আগে আমাদের ইউনিয়নের পশ্চিমচর গ্রামের আজ্জেম নামের এক কৃষক এই সাপকে দেখে দা দিয়ে কেটে দুইভাগ করে ফেলে। এছাড়া, শিকারপুরের সাইদুল মোল্লা তার জমির ধানের আঁটি গাড়িতে তোলার সময় আঁটির নিচে রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পায়। পরে সেই সাপটিকে কয়েকজন মিলে মেরে ফেলেন।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে গত তিন মাসে অয়ন শীল, রুবেল বেপারী ও শেখ লাল মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, ফরিদপুর জেলা সংলগ্ন পদ্মার চর এলাকায় রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব আছে। সেখানেও কয়েকজনকে এই সাপ কামড় দিয়েছে শুনেছি।

আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, রাসেলস ভাইপারের আনাগোনা আমাদের ইউনিয়নের এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। এখন ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় উদ্বেগটা বেশি। আমার ইউনিয়নেই দুজন মারা গেছেন। যেখানে ধান ও ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে সেখানে এর ঝুঁকি বেশি। তাই সচেতনতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান জানান, বর্তমানে হরিরামপুরের চরাঞ্চলের জমিগুলোতে বছরে একাধিক ফসল আবাদ করেন কৃষকরা। আর খেতে ফসল থাকায় ইঁদুরের সংখ্যাও বাড়ছে। পর্যাপ্ত খাদ্য ও বংশবিস্তারের জন্য যথাযথ পরিবেশ থাকায় রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়েছে ওই চরাঞ্চলগুলোতে। আমরা সব সময়ই কৃষক ভাইদের সতর্কতার সাথে খেতে কাজ করার অনুরোধ করছি।

হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না বলেন, হরিরামপুরের চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রবে বেড়েছে। বিষাক্ত সাপ কামড়ালে এন্টিভেনম দেওয়ার আগে বেশ আইসিইউ সাপোর্ট, ইন্টিভিশন (গলার মধ্যে নল দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা), কার্ডিয়াক মনিটরের মতো বেশ কিছু সাপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে। কোন বিষাক্ত সাপ কামড়ালে রোগীর রক্ত ভেঙে ফেলা কিংবা নার্ভকে অবশ করে ফেলতে পারে। যখন এমন কন্ডিশনে রোগী চলে যায় তখন ইন্টিভিশন এবং আইসিইউ সাপোর্টে নিতে হয়। উপজেলা পর্যায়ে এসব সুযোগসুবিধা না থাকায় আমরা রোগীকে এমন সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালে রেফার্ড করার পরামর্শ দেই। তাছাড়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন সীমিত। তবে, এই পরিস্থিতিতে জেলার সমন্বয় মিটিংয়ে চাহিদার কথা উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন পাব।

হরিরামপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান জানান, উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন আজিমনগর, লেছড়াগঞ্জ ও সুতালড়ীর চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেশি। গত তিন মাসেই এই সাপের কামড়ে মারা গেছেন পাঁচজন। সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই দুই জায়গা থেকে খবর এসেছে দুটি সাপকে এলাকাবাসী মেরে ফেলেছে। আমরা ওই ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছি। যেহেতু, এখন বোরো ধানের মৌসুম তাই উপজেলা পরিষদ থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলের কৃষকদের বিশেষ জুতার (গামবুট) ব্যবস্থা করা হবে।

চন্দন / / দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More