ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটির’ (সিসিএস) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) রাজশাহী বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখুরঞ্জন ছাত্র–শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
সিসিএস ও এর যুব শাখা কনজ্যুমার ইয়ুথ বাংলাদেশের (সিওয়াইবি) আয়োজনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন বিষয়ক কর্মশালা এবং উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সিওয়াইবি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. মুরাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. মাঈন উদ্দীন।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন, সিওয়াইবি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রিয়াজ ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসাইন মুন্না।
সম্মেলনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন নিয়ে সেশন পরিচালনা করেন সম্মেলনের বিশেষ অতিথি ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফজলে এলাহী। পরে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক পরপর দুইটি সেমিনার পরিচালনা করেন– সেন্টার ফর গর্ভনেন্স অ্যান্ড সিভিলাইজেশন স্টাডিজের গবেষক মোহাম্মদ তালহা ও বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (বিওয়াইএলসি) সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কাজী শামস ইমতিয়াজ বার্তা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি’ ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করছে– এটা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ভোক্তা অধিকার কেবল অর্থনৈতিক বা আইনি কোনো বিষয় নয়, বরং এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব। আমরা প্রতিনিয়তই দেখি, আম, লিচু, ড্রাগন ফল, কলা ইত্যাদি ফলের সঙ্গে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে, যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ ভোক্তা হিসেবে আমাদের সতেজ ফলমূল এবং নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করার কথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রীরা আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদের শুধু একাডেমিক পড়াশোনা নয়, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও নৈতিক নেতৃত্ব প্রদানের জন্যও প্রস্তুত করা জরুরি। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্র–ছাত্রীদের মধ্য থেকে ভালো মানের নেতৃত্ব গড়ে তোলা। যারা নিরাপদ খাদ্য, সঠিক তথ্য ও ন্যায্য বাজার ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলবে– তারাই প্রকৃত অর্থে সমাজের নেতৃত্ব দিতে পারবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগে শেষ সেশনে ক্যারিয়ার নিয়ে দুর্দান্ত কিছু আলোচনা শুনছিলাম। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি রিজিউম বা সিভি। যারা ক্যারিয়ারের নবীন আবেদনকারী, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। এখানে সম্ভবত রেফারেন্স নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। একজন প্রশ্ন করেছিলেন– সিভিতে রেফারেন্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আসলে, আমার সিভিতে যে তথ্যগুলো দিয়েছি সেগুলো সত্য কি না তা যাচাই করার জন্য রেফারেন্স প্রয়োজন। আবার যদি উচ্চশিক্ষায় যেতে চাই, তবে রেফারেন্স সেখানে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় মনে করি উন্নত দেশগুলোতে নেপোটিজম বা বৈষম্য নেই, কিন্তু বাস্তবে সারা পৃথিবীতেই বৈষম্য বিদ্যমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই চাই সাশ্রয়ী দামে খাবার খেতে। কিন্তু শুধু সস্তা বলেই কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। খাদ্য যদি নিরাপদ না হয়, তবে তা মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের প্রথম শর্ত হওয়া উচিত, খাদ্য অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। কম দামের খাবার খাব, কিন্তু নিরাপদ খাবার খাব। এজন্য উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যদি সচেতন ভোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠে, তবে তারা পরিবার ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।’
সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে সনদপত্র তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।