আসছে মুসলমানদের পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। এই এক উপলক্ষ্য নিয়ে প্রতিবছর রাজধানীসহ সারা দেশে প্রচুর ইফতার জাতীয় খাবার বিক্রি হয়। এই সুযোগে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় ইফতারি তৈরিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও ভেজালসামগ্রী ব্যবহার করে।
এইসব ক্ষতিকর ও ভেজাল সামগ্রী মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হচ্ছে। খাদ্যে বিষাক্ত ও ভেজালসামগ্রী ব্যবহারের কারণে দেশে ক্যানসার ও হৃদরোগসহ নানা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। তাই জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আমরা স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারি এবং ভেজাল ও বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছি। এটি নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ জোরালো ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
বুধবার (৫ মার্চ) সকাল ১০টায় ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে ‘বিষ ও ভেজালমুক্ত নিরাপদ ইফতারির জন্য করণীয়’ শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা একথা বলেন। পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান–এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন পবার সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পুষ্টিবিদ ও পবার সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়েজ উল্লাহ। পবার কার্যকরী সভাপতি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ; শিক্ষাবিদ, লেখক ও খ্যাতিমান অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী; পবার সহসভাপতি সমাজকর্মী হাফিজুর রহমান ময়না সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
এছাড়া নাসফের সাধারণ সম্পাদক ও পবার সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী; পবার সম্পাদক ও বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন; চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহ–সভাপতি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া ও পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ রাসেল সংবাদ সম্মেলনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি পবার ও গ্রীন ফোর্সের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পবার সংবাদ সম্মেলনে ১০টি সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, সমাজে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মতো এরকম একটি ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এই ভেজাল খাদ্য খেয়ে খেয়ে মানুষ ক্রমান্বয়ে অসুখ হওয়া এমনকি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। এগুলো আমরা নির্বিকারভাবে প্রত্যক্ষ করছি। মনে হচ্ছে ভেজালের কাজে সমর্থিত প্রশাসন ও প্রশ্রয়দাতা প্রশাসন। বিষ খাদ্যে মেশানোর পরিসংখ্যানগত দিক বিবেচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে ভেজালের ভুবনে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থান দখল করেছে অদ্ভুতভাবে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশসহ পৃথিবীর সভ্য ও অন্যান্য দেশে ভেজালকে শুধু দণ্ডনীয় অপরাধই নয় সর্বোচ্চ অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে খাবারগুলো দৃষ্টিনন্দন করার জন্য যে রংগুলো মেশানো হচ্ছে সে রংগুলো শরীরে নানাভাবে ক্ষতি করছে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। এই বিষ মানুষের শরীরে ঢুকে জ্বিনের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এর ফলে পরবর্তী প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হচ্ছে। ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। জাতিকে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দেওয়া সংবিধান ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই আইন প্রয়োগ করে এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে ভেজালমুক্ত খাদ্যের পরিবেশ তৈরি করা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।
আবু নাসের খান বলেন, আমাদের আন্দোলন সবসময় মানুষকে সচেতন করার আন্দোলন। আগের চেয়ে বর্তমানে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে। বর্তমানে ভেজালমুক্ত খাদ্যের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা যদি একটি মানুষকে হত্যা করি তার বিচার হয়। কিন্তু এই ভেজালের মাধ্যমে শত শত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে তার তেমন কোনো কঠিন শাস্তি হয় না।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, রমজান মাসে শরবত মানুষের খুব প্রিয় পানীয়। বাজারে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শরবতগুলোতে কী রঙ মেশানো হয় তা আপনার জানেন। এসব রং বেশির ভাগই খাবার যোগ্য রঙ নয়। এসব রঙ মানুষের শ্বাস কষ্টের সমস্যা বাড়ায়, চোখের সমস্যা বাড়ায় এবং শরীরের ত্বকের ক্ষতি করে। এছাড়া এই রঙ কিডনি ড্যামেজ করে ফেলে। খাবারকে মজাদার করার জন্য যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয় এটাও নানাভাবে মানুষের জীনকে বাধাগ্রস্ত করছে।
আল/ দীপ্ত সংবাদ