নওগাঁর রাণীনগরে ৩লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে বেদম মারপিট করে বাড়ি থেকে বের দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার একডালা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
মারপিটকারী প্রভাবশালী আব্দুল মজিদ আকন্দ একডালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে থানায় অভিযোগ গ্রহণ না করায় নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতে মামলা করেছে ভুক্তভোগী ওই গ্রামের মৃত–মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে দুই সন্তানের জননী অসহায় শিউলী বিবি (৪৭)।
মামলার বাদী শিউলী বিবি জানান, প্রথম স্বামী ভালো না হওয়ার কারণে প্রায় ৫বছর আগে স্বামীকে তালাক দিয়ে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়ি এসে বসবাস করছেন। শিউলিকে বিয়ে করে মাথার উপর ছাতা হওয়ার লোভ দেখায় মজিদ আকন্দ।
এক পর্যায়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ২০ তারিখে মুসলিম শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ১লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে মজিদ আকন্দ শিউলিকে বিয়ে করে। বিয়ের পর মজিদ আকন্দ নানা কৌশলে শিউলির কাছ থেকে পূর্বের সঞ্চয় করা প্রায় ৫লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তিতে মজিদ আকন্দ তার ১ম স্ত্রী, মেয়ে, জামাই, ভাই ও ভাতিজাদের বুদ্ধিতে আরো ৩লাখ টাকা যৌতুকের দাবি করে। যৌতুক হিসেবে দাবি করা টাকা দিতে না চাইলে মজিদ আকন্দ শিউলির সঙ্গে আর সংসার করবে না বলে চলতি মাসের ৫ তারিখ বিকেল বেলায় মজিদ আকন্দসহ অন্যরা সবাই মিলে শিউলি
বিবিকে মারপিট করে। নির্যাতনের পর শিউলি বিবি কোনমতে তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসে।
এরপর ৯ তারিখে মজিদ আকন্দ গোপনে তালাক নামা শিউলির বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তালাক নয় শিউলি সংসার করবে মর্মে শিউলির মাসহ অন্যরা মজিদ আকন্দের বাড়িতে যায়। পরবির্ততে ১২ তারিখে শিউলির বাবার বাড়িতে সন্ধ্যায় মজিদ আকন্দসহ অন্যদের নিয়ে বসে যৌতুক ছাড়া শিউলিকে নিয়ে সংসার করার কথা বলে শিউলির স্বজনরা। কিন্তু মজিদ আকন্দ ৩লাখ টাকা ছাড়া শিউলিকে নিয়ে সংসার করবে না বলে সিদ্ধান্ত জানালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আবার মজিদ আকন্দসহ অন্যরা লাঠি দিয়ে শিউলি বিবিকে বেদম ভাবে মারপিট করে।
এতে করে শিউলি বিবি গুরুত্বর আহত হলে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। শিউলি বিবি একটু সুস্থ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে চলতি মাসের ১৫ তারিখে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করতে ব্যর্থ হলে ওইদিন বিকেলে থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় পরের দিন ১৬তারিখে আদালতের মাধ্যমে সুষ্ঠ সমাধান পাওয়ার আশায় মজিদ আকন্দকে প্রধান করে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শিউলি বিবি।
শিউলি বিবি আরও জানান যে, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা মজিদ আকন্দের অবৈধ তালাক মানে না। অনেক প্রলোভন দিয়ে মজিদ আকন্দ তাকে বিয়ে করেছেন। তাকে বিয়ে করার কারণে চলতি বছর মজিদ আকন্দ হজ পর্যন্ত করতে যাননি। তার অর্থসহ সবকিছুই মজিদ আকন্দ লুট করে নিয়েছে। আর এখন এসে কোন কারণ ছাড়াই মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে বলছে যে তার সঙ্গে আর ঘর সংসার করবে না।
শিউলি বিবির মা জিন্নাতুন বেওয়া বলেন, মজিদ আকন্দ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। পরবর্তিতে মজিদ আকন্দ নিয়ম মাফিক আমাদের সাক্ষী করে কাজীর মাধ্যমে আমার মেয়েকে বিয়ে করেছে। বিনা কারণে মজিদ আকন্দ আমার মেয়েকে মারপিট করেছে। আমি এর বিচার চাই। আমরা গোপনে দেয়া মজিদ আকন্দের তালাক মানি না। যৌতুক ছাড়াই আমার মেয়ে মজিদ আকন্দের ঘর সংসার করবে এই আশায় আদালতের আশ্রয় আমরা নিয়েছি। আশা রাখি আদালত আমাদেরকে সুষ্ঠ বিচার করে দিবেন।
এই বিষয়ে আব্দুল মজিদ আকন্দ মুঠোফোনে জানান, ‘যৌতুকের দাবিতে শিউলিকে মারপিট করার যে অভিযোগ তা সম্পন্ন মিথ্যে ও বানোয়াট। আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু নানা কারণে আমি সম্প্রতি তাকে তালাক দিয়েছি। সে এখন আর আমার স্ত্রী নয়। আমি তার সঙ্গে আর ঘর সংসার করতে চাই না।‘
একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান আলী মুঠোফোনে জানান, এই বিষয়টি আমি লোকমুখে শুনেছিমাত্র। এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে লিখিত কিংবা মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আফ/দীপ্ত নিউজ