স্বাস্থ্যকর যৌনজীবন কেবল দাম্পত্য সম্পর্ক মজবুত করে না, বরং সামগ্রিক মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার প্রতিফলনও বয়ে আনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে, যা যৌনশক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক ৫টি খাবারের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:-
ডার্ক চকলেট:
ডার্ক চকলেট যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। শুধু তাই নয়, এটি মনও ভালো করে। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালী প্রসারিত করতে সাহায্য করে, যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এর ফলে যৌন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে শারীরিক উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। চকলেটের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মানসিক চাপ কমিয়ে যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত চকলেট এড়িয়ে চলাই ভালো। বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন ২০–৩০ গ্রাম পরিমাণে ডার্ক চকলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ঝিনুক:
ঝিনুক দীর্ঘদিন ধরেই প্রাকৃতিকভাবে যৌন উত্তেজক খাবার হিসেবে পরিচিত। এটি জিঙ্কের সমৃদ্ধ উৎস, যা পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধি ঘটায়। টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির ফলে যৌনশক্তি ও গুণগতভাবে শুক্রাণুর মান বাড়াতে সহায়ক। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঝিনুক যৌনশক্তি বাড়াতে খুবই কার্যকর। এটি শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিতেও সহায়ক এবং লিবিডো (যৌন আকাঙ্ক্ষা) বৃদ্ধি করে। ঝিনুক কাঁচা, গ্রিল অথবা স্যুপ হিসেবে খাওয়া যায়। তবে, সী–ফুডে অ্যালার্জি আছে, এমন ব্যক্তিদের এটি পরিহার করা উচিত।
বাদাম:
বাদাম বা বীজজাতীয় খাবার যৌনস্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আখরোট, কাঠবাদাম, কাজু বাদাম, চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্স সিডে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা যৌন শক্তি ও স্ট্যামিনা বাড়ায়। এসব খাবার রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় বা স্ন্যাকসে ১–২ মুঠো বাদাম বা বীজজাতীয় খাবার খাওয়া ভালো।
রসুন:
রসুনের মধ্যে থাকা অ্যালিসিন যৌগ যৌনাঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে যৌন সক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। এটি বিশেষভাবে পুরুষদের জন্য উপকারী। রসুন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে এবং যৌনশক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী যৌন দুর্বলতা কাটানো সম্ভব হতে পারে। রসুন কাঁচা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। তবে, রান্নায়ও ব্যবহার করা রসুনও বেশ উপকারী। প্রতিদিন ২–৩ কোয়া রসুন খাওয়া যেতে পারে।
তরমুজ:
তরমুজ একটি মৌসুমি ফল হলেও প্রায় সারা বছরেই কোনো না কোনো জাতের তরমুজ বাজারে পাওয়া যায়। তরমুজে থাকা সিট্রুলিন অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে, যা রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়। এটি প্রাকৃতিকভাবে ‘ভায়াগ্রা’–র মতো কাজ করে এবং যৌনশক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তরমুজ মানসিক প্রশান্তি এনে যৌন ইচ্ছা বাড়ায় এবং গরমের সময় এটি শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি যৌন শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক।
খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি যৌনশক্তি বাড়ানোর জন্য লাইফস্টাইল পরিবর্তন জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষ করে কার্ডিও ও কেগেল এক্সারসাইজ যৌনস্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে। মানসিক চাপ কমানো এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা উচিত এবং একটি স্বাস্থ্যকর, ব্যালান্সড ডায়েট অনুসরণ করা প্রয়োজন। যৌন দুর্বলতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।