পহেলা বৈশাখ বাঙালির সম্প্রীতির দিন। বাঙালির সর্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে।
বাংলা নববর্ষের সূচনা কবে?
বাদশাহ আকবর জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ শিরাজীকে আদেশ করলেন নতুন একটি বর্ষপঞ্জি (ক্যালেন্ডার) তৈরি করতে। কেননা প্রচলিত হিজরি চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী কৃষকদের খাজনা দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছিলো। চান্দ্র ও সৌরবর্ষ দুয়ের সমন্বয়ে নতুন বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেন শিরাজী; যার প্রচলন ঘটে ১৫৮৪ সালে। ১৫৫৬ সালে আকবরের সিংহাসনে আরোহণ করলে গণনা শুরু হয়।
নতুন বর্ষপঞ্জি প্রথম পরিচিতি পায় ফসলি সন হিসাবে, তারপর হয় বঙ্গাব্দ।
নতুন পঞ্জি অনুসারে চৈত্র মাসের শেষ দিনে বর্ষবিদায় আর বৈশাখের প্রথম দিনে বর্ষশুরু। বিদায় দিনে কৃষকরা খাজনা দেয় আর শুরুর দিনে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করায়।
বৈশাখের ছুটি ঘোষণার দাবি
১৯৫১ সালে নবগঠিত পাকিস্তানে সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত লেখক-শিল্পী মজলিস পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সংগঠনে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাকিস্তান আমলে পহেলা বৈশাখ আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছিল সাংস্কৃতিক হাতিয়ার। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি বলতে শুরু করে, এটা পাকিস্তান আদর্শের পরিপন্থী। বাঙালি সংস্কৃতির ওপর এটি ছিল চরম আঘাত। বাঙালি তা সহ্য করেনি, রুখে দাঁড়িয়েছে। সব শ্রেণি-পেশা-ধর্মের মানুষ দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
শাসকগোষ্ঠীর অগ্রাহ্যে বাঙালি ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদে মুখর হন। ‘এভাবেই পূর্ববাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় বাংলা নববর্ষ এবং তার উদযাপনের আয়োজন’, লিখেছেন প্রয়াত লোকসংস্কৃতি গবেষক শামসুজ্জামান খান।
১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগ সরকারকে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়।
পরে মুখ্যমন্ত্রী শের ই বাংলা একে ফজলুল হক নির্দেশে পহেলা বৈশাখ সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায়। তবে পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট সরকার স্থগিত এবং সামরিক শাসন জারি করায় ছুটি স্থায়ী হয়নি।
বাংলা একাডেমির নতুন সভাপতি হলেন অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, মুখ্যমন্ত্রী শের ই বাংলা একে ফজলুল হক স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্বে থাকলেও পহেলা বৈশাখ উদযাপনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা রেখেছিলেন।