যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে বিএনপিকে টায়ার থ্রি স্তরের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত। ২০১৪ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত বিএনপির দলীয় পরিচয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করা একজন আবেদনকারীর আবেদনও মঞ্জুর করে নি ইমিগ্রেশন অথরিটি।
নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও নিউজার্সির অভিবাসন সংশ্লিষ্ট আদালতের রায়ে দেখা যায়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ বিএনপিকে ‘টায়ার–থ্রি‘ বা তৃতীয় ক্যাটাগরির সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে – এই মর্মে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় বিএনপির কর্মীরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার প্রাথমিক যোগ্যতা হারিয়েছে। এ কারণে বিএনপির পরিচয়ে আবেদনকারীদের বিভিন্ন রাজ্যে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, শুধুমাত্র টেক্সাসের এলপাসো ডিটেনশন সেন্টারে বিএনপির পরিচয়ে আশ্রয় প্রার্থনাকারী ৮০ জনের বেশি বাংলাদেশী আটক রয়েছে।
আদালতের রায়সমূহ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করার ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মৌলবাদ ও সহিংসতা সৃষ্টি এবং গণতান্ত্রিক সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উৎখাত সহ ১৬টি কারণ উপস্থাপন করেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ ।
উল্লেখ্য, টায়ার থ্রি সন্ত্রাসী সংগঠন বলতে এমন সংগঠনকে বোঝায় যা নিষিদ্ধ নয় এবং যাদের গঠনতন্ত্র প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না কিন্তু সন্ত্রাসীদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দেয় ও সহিংস কর্মসূচিতে ইন্ধন যোগায়। একে আনডেসিগনেটেড টেরর গ্রুপও বলা হয়।
২০১৫ সালে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের টায়ার থ্রি সন্ত্রাসী তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে লেক্সিসনেক্সিস নামে একটি ল ফার্মকে নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে ইতিবাচক সাড়া পায় নি।
কানাডার আদালত সহিংসতা সৃষ্টি, বল প্রয়োগ এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের চেষ্টা করার অভিযোগে চার বার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এবার বিএনপি মিলিয়র ডলার ব্যয়ে এ্যাডেলম্যান এন্ড কোং ল অফিস এবং স্টুয়ার্ট শর্মা হার্সাইনি ল ফার্মকে তাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়। বিএনপির পক্ষ থেকে “সন্ত্রাসী সংগঠন নয়” এই মর্মে যে দাবি করা হয় তা এডভোকেট রাজ শর্মার উপস্থাপন করা বক্তব্য।
কানাডার আদালতের রায়ে বিএনপিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন না বললেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী এবং গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের অপচেষ্টার জড়িত বলে মন্তব্য করা হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপিকে টায়ার থ্রি স্তরের বা আনডেসিগনেটেড সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বিএনপির নিয়োগকৃত আইনজীবী নিজেই লিখেছেন বিএনপিতে সন্ত্রাসী রয়েছে।
উল্লেখ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও সেটন হল ইউনিভার্সিটি সহ যুক্তরাষ্টের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিকে টায়ার থ্রি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার বিষয়বস্তু ইমিগ্রেশন ল–এর পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত।
সূত্র:
১. জুন ১৬, ২০২৩
US Court Designates BNP As Undesignated Terror Group
https://www.easternherald.com/wp-content/uploads/2023/06/BNP-Terrorist-US-Court-2.pdf
https://www.easternherald.com/2023/06/16/shocking-revelation-us-court-designates-bnp-as-undesignated-terror-group/
২. ২০২২ সালের মামলা
রহমান বনাম হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মামলা
https://casetext.com/case/rahman-v-us-dept-of-homeland-sec
৩. ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (বার্কলে ল) এর পাঠ্য
https://www.law.berkeley.edu/wp-content/uploads/2017/05/BNP_BIA-Case-2.pdf
৪. সেটন হল ইউনিভার্সিটির পাঠ্য
https://casetext.com/case/rahman-v-us-dept-of-homeland-sec
৫. ২০১৭ সালে নিউ ইয়র্কে বিএনপি নেতা জসীম উদ্দিনের পিটিশন
http://www2.ca3.uscourts.gov/opinarch/171056pa.pdf
আল/দীপ্ত সংবাদ