এলাকায় ‘খেজুর গাছি’ নামে পরিচিত গোলাম হোসেনের বয়স এখন ষাট ছুঁই ছুঁই। নিজের জমি–জমা তেমন নেই বললেই চলে। যশোর শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে তিন দশক ধরে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং সেই রস থেকে গুড় উৎপাদন করে আসছেন তিনি।
যে খেজুর রস ও গুড়ের জন্য যশোর জেলা বিখ্যাত, সেই ব্যান্ডিং পণ্যের ঐতিহ্য রক্ষার্থে যারা কাজ করেন সেই গোলাম হোসেনের মতো তিন গাছি সম্প্রদায়কে ‘গাছি সম্মাননা‘ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় যশোর শহরের খড়কিতে অবস্থিত পিঠা পার্কের আয়োজনে পিঠা পার্বণ ও গাছি সম্মননা অনুষ্ঠানে তাদের সম্মননা দেয়া হয়।
সম্মননা প্রাপ্তরা হলেন, শহরের খড়কির গোলাম হোসেন, আব্দুল মাজেদ ও আশরাফ হোসেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা এই গুণী তিন খেজুর গাছিকে সম্মননা স্মারক তুলে দেন। আইডিয়া পিঠা পার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীনের সভাপতিত্বে অতিথি ছিলেন, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা, প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, আজকের পত্রিকার যশোর প্রতিনিধি জাহিদ হাসান, আইডিয়া পিঠা পার্কের সমন্বয়ক সোমা খান, আইডিয়া যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তানজিয়া জাহান মমতাজ, আইডিয়া স্পোকেন এর সমন্বয়ক নাবিলা সুলতানা, উইনি গ্রুপের নির্বাহী প্রধান মল্লিকা আফরোজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস।
অনুষ্ঠানে আইডিয়া পিঠা পার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা হামিদুল হক বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে খেজুরের রস, গুড়। আমাদের যশোর–ও সেই নামে বিখ্যাত। কিন্তু নেপথ্যে থেকে যারা এই কাজটি নিপুণ দক্ষতায় করেন, তারা রয়ে যান পেছনে। আজ তাদের সম্মান জানিয়েই শুরু হোক আমাদের পিঠা উৎসব। সমাজব্যবস্থায় দেখা যায়, ডাক্তারের ছেলে এখন ডাক্তার হয়, শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হয় কিন্তু গাছি–র ছেলে আর গাছি হয়না; কারণ এই পেশায় না পান তারা যোগ্য সম্মান, না থাকে ন্যায্যমূল্য। যে সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির পথে, বর্তমান প্রজন্মের সামনে এই পেশা কে তুলে আনতেই আইডিয়ার ছেলেমেয়েরা আজ মঞ্চস্থ করবে নাটক; যশোরের আঞ্চলিক সঙ্গীত ‘ঠিলে ধুয়ে দে বউ, গাছ কাটতি যাবো‘ – শিরোনামে নাটকে সংস্কৃতির একাল–সেকালের ধারা থাকবে।‘ সংবর্ধিত গাছি গোলাম হোসেন বলেন, “গত ৩৫–৪০ বছর ধরে আমি গাছ কাটি; তাও ২০–২৫ হাজার গাছ তে আমি রস বের করিছি, এখন শরীরে কুলোয় না, তাও পেটের দায়ে মাঝেসাঝে মাঠে কাজ করি। কিন্তু এই কাজ কে আগে কেউ এরাম গুরুত্ব দেয়নি বাপু, এরাম জাগায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে আসবো– এমন কথা ভাবিও নি। আমার খুব ভালো লাগছে।”
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে আইডিয়া পিঠা পার্কের সদস্যদের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হয় ‘ঠিলে ধুয়ে দে বউ, গাছ কাটতি যাবো‘ শিরোনামে বাঙালি সংস্কৃতির একাল–সেকাল নিয়ে বিশেষ নাটক।তার সঙ্গে বাড়তি আমেজ নানান স্বাদের পিঠাপুলি। এতে অংশ নিয়ে সবাই আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের রকমারি পিঠার স্বাদ গ্রহণ করেন। গান ও নৃত্যের আর নাটক মঞ্চায়নের
মধ্যে মুখরিত পুরো উৎসব একপাশে ছোট চুলা জ্বালিয়ে গ্রাম্য পদ্ধতিতে তৈরি করা হচ্ছে হরেক রকমের পিঠা। পিঠার মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে পুরো অনুষ্ঠান অঙ্গন।
আইডিয়া পিঠা পার্ক এর সমন্বয় সোমা খান বলেন, “প্রতিবছর শীত আসলেই পিঠা পার্বণ উৎসব আইডিয়া পিঠা পার্ক আয়োজন করে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি আমাদের সংস্কৃতির সকল বিষয়ে নিয়ে আয়োজন করার। এবার স্যার এর পরিকল্পনায় আর আইডিয়ান দের পরিচালনায় নাটক ও রাখা হয়েছে।” আয়োজনের সমন্বয়ক ও আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “আজকের আয়োজন আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের এবং আবেগের। আমারই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার।“
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ