কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলা। ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া না কেনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা। রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী চামড়ার হাট হিসেবে পরিচিত লালবাগের পোস্তা ও সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে শনিবার (৭ জুলাই) দুপুর থেকেই দেখা গেছে হতাশা ও ক্ষোভ।
চামড়া সংগ্রহকারী একাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, আড়তদাররা তা মানছেন না। ফলে প্রতিটি চামড়ায় গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
পোস্তায় দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে বিপুল পরিমাণ কোরবানির চামড়া এনে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। তবে, আগ্রহ নিয়ে চামড়া এনেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। কেউ কেউ ২৮০–৩০০ টাকার চামড়া মাত্র ১০০–১৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চলতি বছর সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৫০–৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫–৪৮ টাকা। ছাগলের চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮–২০ টাকা। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেই দামে চামড়া বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা।
ট্যানারি মালিকরা বলছেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাতে লবণ, শ্রমিক, পানি, বিদ্যুৎ, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে finished leather রপ্তানির মূল্য হ্রাস পেয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কাঁচা চামড়া বাজারে।
সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতেও একই চিত্র। ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে গেলেও সেখানকার ট্যানারিগুলোতে সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী লেনদেন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সোহেল মিয়া বলেন, “প্রতিবারই ঈদের পর চামড়ার বাজারে ধস নামে। এবছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সরকার দাম ঠিক করে দেয়, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এতে আমাদের মতো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেঁচে থাকি লোকসানে।“
এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান দীপ্ত নিউজকে বলেন, “চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে চলতে হয়। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন। তাই বাজারের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে দাম নির্ধারণ করতে হবে।“
বাংলাদেশে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় প্রায় ৮০–৮৫ লক্ষ পশু কোরবানি দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ চামড়া ঢাকা ও আশেপাশের এলাকা থেকেই সংগ্রহ করা হয়। অথচ নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে সম্ভাবনাময় এই শিল্প।